Home | Menu | Poem | Jokes | Games | Science | Biography | Celibrity Video | Dictionary

বাংলাদেশ এবং ফারাক্কা বাঁধ

ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি বাঁধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই বাঁধটি অবস্থিত। ১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। ফারাক্কা বাঁধ ২,২৪০ মিটার ( ফুট) লম্বা। বাঁধ থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ফিডার খালটির দৈর্ঘ্য ২৫ mile ( কি.মি.)।

১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে কলকাতা বন্দরের কাছে হুগলি নদীতে পলি জমা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই পলি ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করা হয়। শুখা মরসুমে (জানুয়ারি থেকে জুন) ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গার জল হুগলি নদীর অভিমুখে চালিত করে।

হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি বাঁধটি তৈরি করে। বাঁধটিতে মোট ১২৩টি গেট রয়েছে। ফারাক্কা সুপার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জল এই বাঁধ থেকেই সরবরাহ করা হয়।


ফারক্কা বাঁধ ভারত তৈরি করে কলকাতা বন্দরকে পলি জমা থেকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু এটা ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে, বিশেষ করে বাংলাদেশর দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে। এটি প্রায় ১৮ কি.মি লম্বা এবং মনহরপুরে অবস্থিত।

ইতিহাস

ভারতের একতরফা গঙার পানি সরাবার কারণে যে শুধু বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়; বরং এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, বন ও নৌ-পরিবহন ব্যাবস্থা ব্যাপক বিপর্যয়ের সমুক্ষিন হচ্ছে। এ বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২৯ অক্টোবর, ১৯৫১ সালে তখন তৎকালীন পাকিস্তান সরকার গ্রীষ্মকালে গঙা নদী হতে বিপুল পরিমাণ পানি পশ্চিমবঙ্গের ভাগরথি নদী পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অপসারণ করার ভারতীয় পরিকল্পনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত জবাব দেয় তাদের এই পরিকল্পনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং এর ফলাফল সম্পর্কে পাকিস্তানি উদ্যেগ শুধু মাত্র তত্ত্বীয় ব্যাপার। সেই থেকে গঙার পানি বন্টন নিয়ে লম্বা আলাপ-আলোচনার জন্ম দেয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক আলোচনা করে। কিন্তু এই আলোচনা যখন চলছিল তখন ভারত ফারাক্কা বাঁধের নির্মান কাজ অব্যহত রাখে এবং ১৯৭০ সালে এর কাজ সমাপ্ত করে। এ বাঁধ বাংলাদেশ-ভারত সিমান্ত হতে ভারতের প্রায় ১৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর গঙার পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা শুরু করে। ১৬ মে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা এক যৌথ ঘোষণার বলেন যে, গঙায় কম পানি প্রবাহের কালে সঠিক পানি বন্টন নিয়ে তারা একটা চুক্তি করবে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের এক সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত হয় যে, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে আসার আগে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। যদিও বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে দশ (২১ এপ্রিল ১৯৭৫ থেকে ২১ মে ১৯৭৫) দিনের জন্য ভারতকে গঙা হতে ৩১০-৪৫০ কিউসেক পানি অপসারণ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু ভারত ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত গঙা নদী হতে ১১৩০ কিউসেক পানি অপসারণ করে পশ্চিমবঙের ভাগরথি-হুগলি নদীতে প্রবাহিত করে।

বিভিন্ন সময়ের পানি বন্টন চুক্তি

ভারতকে পানি অপসারণে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়ে, বাংলাদেশ এই বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপন করে। ২৬ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ভারতকে বাংলাদেশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়টির সুরাহার করার নির্দেশ দিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। কয়েকবার বৈঠকের পর উভয় দেশ ৫ নভেম্বর ১৯৭৭ সালে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারত পরবর্তি পাঁচ বছরের (১৯৭৮-৮২) জন্য শুষ্ক মৌসুমে গঙার পানি ভাগ করে নেবে। ১৯৮২ এর অক্টোবরে উভয় দেশ ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে পানি বন্টনের একটি চুক্তি করে। নভেম্বর ১৯৮৫ সালে আরও তিন (১৯৮৬-৮৮) বছরের জন্য পানি বন্টনের চুক্তি হয়। কিন্তু একটি দীর্ঘ চুক্তির অভাবে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য গঙার পানি ব্যবহারে কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কোনো চুক্তি না থাকায় ১৯৮৯ সালের শুষ্ক মৌসুম থেকে ভারত একতরফা প্রচুর পরিমাণ পানি গঙা থেকে সরিয়ে নেয়, ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশর নদ-নদীতে পানি প্রবাহের চরম অবনতি ঘটে। ১৯৯২ সালের মে মাসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের এক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারত বাংলাদেশকে সমান পরিমাণ পানি দেবার ব্যাপারে সম্ভাব্য সকল কিছু করবে। ফলে এরপর দুই দেশের মধ্য কোন মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয় নাই। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রীজ অঞ্চলে মাত্র ২৬১ কিউসেক পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়, যেখানে ফারাক্কা-পূর্ব সময়ে একই অঞ্চনে ১৯৮০ কিউসেক পানি প্রবাহিত হত। ১৯৯৩ সালের মে মাসে যখন উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীরা আবার মিলিত হন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশেকে দেওয়া তার কথা রাখতে ব্যর্থ হন। অবশেষে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙার পানি বন্টন চুক্তি" সই করেন।

বাংলাদেশের ক্ষতি

শুষ্ক মৌসুমে গঙার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসানের সম্মুক্ষিন হতে হয়। প্রত্যক্ষ ভাবে বাংলাদেশশর প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়; যদি পরোক্ষ হিসাব করা হয়, তাহলে বাংলাদেশর ক্ষতির পরিমাণ অনেক গুণ ছাড়িয়ে যাবে।

নদীর নাব্যতা

ফারাক্কা পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙা নদীর (পদ্মা) প্রবাহে চরম বিপর্যয় ঘটে। প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা কমে যায়। ফলে প্রায় বাংলাদেশর বর্তমানে প্রায়ই বড় বন্যা সম্মুক্ষিন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশর গড়াই নদী এখন সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত।

মাটির লবনাক্ততা

ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের মাটির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা খুলনার রুপসা নদীর পানিতে ৫৬৩.৭৫ মিলিগ্রাম/লিটার ক্লোরাইড আয়নের উপস্থিতি পেয়েছেন। তাছাড়া, মিঠা পানির সরবরাহ কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে লবন, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিতে প্রবেশ করছে।

কৃষি

কৃষির অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। পানির স্তর অনেক নেমে যাওয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের জি-কে সেচ প্রকল্প মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেচযন্ত্র গুলো হয়ত বন্ধ হয়ে আছে অথবা সেগুলোর উপর তার ক্ষমতার চাইতে বেশি চাপ পড়ছে। এই প্রকল্পের অন্তর্গত প্রায় ১২১,৪১০ হেক্টর জমি রয়েছে। মাটির আর্দ্রতা, লবনাক্ততা, মিঠা পানির অপ্রাপ্যতা কৃষির মারাত্বক ক্ষতি করেছে।

মাৎস

পানি অপসারণের ফলে পদ্মা ও এর শাখা-প্রশাখাগুলোর প্রবাহের ধরণ, পানি প্রবাহের বেগ, মোট দ্রবনীয় পদার্থ (Total dissolved solids) এবং লবনাক্ততার পরিবর্তন ঘটেছে। এই বিষয় গুলো মাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গঙার পানির উপর অত্র এলকার প্রায় দুইশতেরও বেশি মাছের প্রজাতি ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ী নির্ভর করে। ফারাক্কা বাঁধের জন্য মাছের সরবরাহ কমে যায় এবং কয়েক হাজার জেলে বেকার হয়ে পরে।

নৌ-পরিবহন

শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ৩২০ কিলোমিটারের বেশি নৌপথ নৌ-চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, কয়েক হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ে, নৌ-পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়।

ভূ-অভ্যন্তরে পানির স্তর

ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তর বেশিরভাগ জায়গায়ই ৩ মিটারের বেশি কমে গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন দ্রবিভুত পদার্থের , ক্লোরাইড, সালফেট ইত্যাদির ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেও পানির স্তর কমছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি, শিল্প, পানি সরবরাহ ইত্যাদির উপর। মানুষের বাধ্য হয়ে ১২০০ মিলিগ্রাম/লিটার দ্রবিভুত পদার্থ সম্পন্ন পানি পান করছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO = World heath organization) ৫০০ মিলিগ্রাম/লিটারের কম দ্রবিভুত পদার্থ সম্পন্ন পানিকেই মানুষের পান করার জন্য উপযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।

অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন জীবন বদলে যাবে

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান ধরণের সমস্যায় ভুগি । যে সমস্যায় আমরা প্রায় সবাই পড়ি তা হল সম্পর্ক । বন্ধুর সাথে সম্পর্ক , বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক । বাবা মা, ভাই বোন থেকে শুরু করে কাঁচা বাজারের সব্জি বিক্রেতা সবার সাথেই সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আপনাদের সবার পরিচিত এমন অনেক বন্ধু বা আত্নীয় আছে দেখবেন তারা খুব জুয়েল হয় । যেমন – আপনি হয়ত কোন বদরাগী কোন মানুষের সামনে যেতে ভয় পান । কিন্ত সেই জুয়েল লোকটি তার সাথে অবলীলায় হাসি তামাসা করে । যা করার কথা হয়ত আপনি কোনদিন চিন্তাই করেননি । তাহলে আপনার পরিচিত সেই জুয়েল লোকটি কিভাবে তা করে ? আজ থেকে যদি আপনিও তাই পারেন তাহলে কেমন লাগবে আপনার ? কি বিশ্বাস হচ্ছে না ? আজ তাই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব ।

ডেল কার্নেগীর নাম আপনারা সবাই জানেন । তার অমূল্য বইখানি ফুটপাতে খুব কম মূল্যে বিক্রি হয় । তিনি খুব চমৎকার ভাবে এর সমাধান দিয়ে গেছেন । ১৮৮৮ সালে আমেরিকায় জন্ম তার । এরকম বিরল প্রতিভার মানুষকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যায় । আর ঐশী পাবলিকেশন্স ও ফারুক নওয়াজ ভাইকে ধন্যবাদ জানাই তার অমূল্য বইটি বঙ্গানুবাদ করার জন্য । সেই সাথে ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছি ।

অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন –

মনে রাখবেন অপর ব্যক্তি হয়ত সম্পূর্ণ ভুল করতে পারে । তবে তা সে মনে করে না । এজন্য তাকে দোষ দিবেন না । যে কোন বোকাই এটা করতে পারে । তাকে শুধু বোঝার চেষ্টা করুন । একমাত্র বুদ্ধিমান , সহনশক্তিসম্পন্ন , আলাদা ধরণের মানুষই এটা করে থাকেন ।

অন্য ব্যক্তি যে এরকমভাবে কাজ করে তার একটা কারণ আছে । সেই গোপন কারণটা খুঁজে বের করুন । তাহলেই তার এরকম ব্যবহারের কারণ বা হয়ত তার ব্যক্তিত্বের কথাটাই বুঝতে পারবেন । দয়া করে সততার মধ্য দিয়ে তার জায়গায় নিজেকে রাখুন । আপনি যদি নিজেকে বলেন, ‘আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম তাহলে আমার অনুভুতি কেমন হত বা কিভাবে চলতাম ?’ এরকম করতে পারলে আপনি প্রচুর বিরক্তি আর সময় বাঁচাতে পারবেন । কারণ কারণটা খুঁজে পাওয়ার জন্য আগ্রহী হওয়ায় তার ফলের জন্য ততটা বিরক্ত আমরা হব না । আর এছাড়াও এতে আপনি মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা প্রচুর বাড়াতে পারবেন ।

কেনেথ এম গুড তার ‘How to turn people into gold’ বইতে লিখেছেন, ‘এক মিনিট অপেক্ষা করে দেখুন আপনার নিজের কাজে আপনার উৎসাহ কতটা আছে । তুলনা করে দেখুন অন্য কোন ব্যাপারে আপনার উৎসাহ কতটা কম । এবার বুঝে দেখুন পৃথিবীতে অন্য যে কোন লোকই ঠিক এইরকমই ভাবে । তারপর লিঙ্কন আর রুজভেল্টের সঙ্গে আপনি আয়ত্ত করতে পারবেন যে, মানুষের সঙ্গে ব্যবহার নির্ভর করে অপর লোকটির দৃষ্টিকোণ বুঝে নেবার আন্তরিকতার উপরেই।’

বেশ কয়েক বছর ধরে আমি অবসর কাটাতে চেয়েছি আমার বাড়ীর কাছাকাছি একটা পার্কে বেড়িয়ে আর ঘোড়ায় চড়ে । আগেকার কালের সেই গলদের মতই আমি একটা ওক গাছকে দারুণ ভালবাসতাম । তাই প্রত্যেক বছরে অপ্রয়োজনীয় আগুন লেগে ছোট ছোট গাছ পুড়ে যেতে দেখে আমি খুব কষ্ট পেতাম । এই অসাবধানী ধূমপানকারীদের জন্য লাগত না । এটা লাগত ছোট ছোট ছেলেরা গাছের তলায় আগুন লাগিয়ে ডিম ভেজে খাওয়ার জন্য । মাঝে মাঝে এই আগুন এতই বিরাট আকার ধারণ করতো যে ফায়ার ব্রিগেডকে তার মকাবেলা করতে হত । পার্কের এক কোনে বোর্ডে অবশ্য লেখা ছিল যে, কেউ কোন আগুন জ্বালালে জরিমানা বা কারাদণ্ড হতে পারে । কিন্তু নোটিশটা পার্কের এমন জায়গায় টাঙ্গানো ছিল যে ছেলেরা কেউই সেটা দেখতে পেত না । একজন ঘোড়সওয়ার পুলিশই পার্কের এসব তত্ত্বাবধান করত । কিন্তু সে তার কর্তব্য তেমন গুরুত্ব সহকারে করত না । আর আগুনও যথারীতি জ্বলত প্রতি ঋতুতেই । একবার আমি আগুন লক্ষ্য করে পুলিশটির কাছে ছুটে গিয়ে তাকে আগুনের কথা বলে দমকলে খবর দেবার কথা বললাম । পুলিশটি অম্লানবদনে উত্তর দিল আগুন লাগলে খবর দেয়া তার কাজ নয় ! আমি প্রায় মরিয়া হয়ে উঠলাম আর এরপর যখন ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতাম ছেলেদের আগুন জ্বালাতে দেখলেই তাদের তাড়া করতাম । আমি লজ্জিত ও গোঁয়ার ছেলেদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা দেখিনি । আমি স্বনিয়োজিত আইন রক্ষক হয়েই কাজ করতে চাইতাম । আগুন জ্বালাতে দেখলে আমার মন এমনই খারাপ হয়ে উঠত যে ঠিক করার বদলে ভুলই করে বসতাম । আমি কর্তৃত্ব ব্যঞ্জকস্বরে ছেলেদের সতর্ক করে বলতাম যে এজন্য তাদের জরিমানা আর জেলও হতে পারে । তাদের গ্রেপ্তারের ভয়ও দেখাতাম । আমি কেবল নিজের মনকেই হাল্কা করতে চাইতাম, তাদের মন বিচার করতাম না ।

ফলাফল কি হল ? ছেলেরা কথা শুনত – বেশ অসন্তুষ্ট হয়েই মেনে নিত । আমি পাহাড়ে ঘোড়ায় চড়ে উঠে গেলে আমার ধারণা তারা আবার আগুন জ্বালাত আর বোধহয় সারা পার্কটাই পুড়িয়ে ছাই করতে চাইত ।

সময় কেটে চললে আমি আশা করলাম মানবিক সম্পর্ক নিয়ে আমার নতুন কিছু জ্ঞান সঞ্চয় হয়েছে । এবার একটু কৌশলী হই, আর অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সব কিছু দেখতে অভ্যস্ত হই । এর ফলে হুকুম দেবার বদলে জ্বলন্ত আগুন দেখে এগিয়ে গিয়ে অনেকটা এইভাবে শুরু করতামঃ-

“কি ছেলেরা, সময় ভাল কাটছে ? আর কি রান্না হচ্ছে ? ... ছেলে বয়সে আমরাও আগুন ধরাতাম, এখনো আগুন ধরাতে ভাললাগে । কিন্ত তোমরা বোধহয় জান না বাগানে আগুন জ্বালানো খুব বিপদজনক । আমি অবশ্য জানি, তোমরা কোন অনিষ্ট করতে চাওনা । তবে অন্য ছেলেরা সেরকম সাবধানী নয় । ওরা তোমাদের আগুন জ্বালাতে দেখে আগুন জ্বালায় অথচ খাওয়ার পর নিভিয়ে যেতে ভুলে যায় । আর সেটা শুকনো পাতায় লেগে সব গাছ পুড়িয়ে ফেলে । তবে আমি কোন হুকুম করে তোমাদের আনন্দ মাটি করতে আসিনি । আমি চাই তোমরা আনন্দ কর । তবে দেখ, তোমরা শুকনো পাতাগুলো এখনই আগুনের কাছ থেকে সরিয়ে নাও, আর যাওয়ার সময় ধুলোয় আগুনটা চাপা দিতে ভুলে যেও না । করবে তো এটা ? এরপর যখন আনন্দ করতে চাইবে পাহাড়ের উপর যেখানে বালি আছে সেখানে ধরালে কেমন হয় ! তাতে কোন ক্ষতিও হবে না । তাছারা এখানে আগুন জ্বালালে জেলও হতে পারে । ... তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ । আচ্ছা এবার আসি । তোমরা আনন্দ কর ।”

এধরনের কথায় কত তফাৎ ঘটে যায় । এর ফলে ছেলেরা সহযোগিতা করতে চায় । কোন বিরক্তি বা অসহিষ্ণুতা তাদের মধ্যে থাকে না । তাদের হুকুম করে বন্ধ করতে হয় না । কারণ তারা তাদের মুখ রক্ষা করতে পেরেছে এই চিন্তাই তাদের মন ভাল রাখে অনিষ্ট করা থেকে বিরত রাখে এবং তাদের বন্ধুদেরকেও তারা সাবধান করে দেয় । আর আমিও ভাল থাকি । আমি তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা দেখতে চেয়েছিলাম এবং সেভাবেই অবস্থাটা সামাল দিয়েছি ।

এর পরের বার কাউকে ঐ আগুন নেভানোর কথা বলার বা অন্য কাজ করানোর আগে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা একটু চোখ বন্ধ করে দেখে নিন । এটা করলেই ভাল নয় কি ? নিজেকে প্রশ্ন করুনঃ ‘লোকটি একাজ করতে চায় কেন ?’ এটা সত্যি যে এতে সময় লাগবে । তবে তাতে নতুন বন্ধু পাবেন । ঝগড়া রেষারেষির বদলে ভাল ফলও পাবেন । জুতোর তলাও কম ক্ষয় হবে ।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ডিন, ডনহ্যাস বলেছিলেন, ‘কারও অফিসে গিয়ে তার সাথে দেখা করার আগে অফিসের সামনের রাস্তায় দুঘণ্টা পায়চারী করতে চাই, কিন্তু কোন পরিষ্কার ধারণা না নিয়ে ঢুকতে চাই না । যেমন আমি কি বলব তারই বা উত্তর কি হবে । যার কাছে যাব তার দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে । তার সম্বন্ধে যতটা পারা যায় জেনে রাখাই শ্রেয় ।’

কথাটা এতই দামী যে বারবার সেটা মনে রাখা দরকার ।

এই লেখা পড়ার পর যদি সর্বদা সবকিছু অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অভ্যাস জন্মায় তাহলে এটা নিঃসন্দেহে আপনার জীবনে হয়ে উঠবে একটা দিগ দর্শন আর সুন্দর কোন অভিজ্ঞতা ।

তাই অন্যের বিরক্তি না জাগিয়ে মানুষকে যদি পরিবর্তন করতে চান তাহলে নিয়ম হলঃ
আন্তরিকভাবে অপরের দৃষ্টিকোণ থেকেই সব কিছু দেখার চেষ্টা করুন ।

দুর্গাপূজার ইতিহাস

মূর্তিতত্ত্ব

বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা বা সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী; তাঁর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ; বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিকেয়।কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই সপরিবার দুর্গার প্রচলন করেন । তাঁরা কার্তিকেয়র রূপ দেন জমিদারপুত্রের, যা তৎপূর্ব ছিল সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতা রূপে । এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর-সংলগ্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গা এক বিশেষ মূর্তি দেখা যায়। সেখানে দেবীর ডানপাশে উপরে গণেশ ও নিচে লক্ষ্মী, বামে উপরে কার্তিকেয় ও নিচে সরস্বতী এবং কাঠামোর উপরে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন শিব ও দুইপাশে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া অবস্থান করেন। কলকাতার কোনও কোনও বাড়িতে দুর্গোৎসবে লক্ষ্মী ও গণেশকে সরস্বতী ও কার্তিকেয়ের সঙ্গে স্থান বিনিময় করতে দেখা যায়। আবার কোথাও কোথায় দুর্গাকে শিবের কোলে বসে থাকতেও দেখা যায়। এগুলি ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গার বিভিন্ন রকমের স্বতন্ত্র মূর্তিও চোখে পড়ে। তবে দুর্গার রূপকল্পনা বা কাঠামোবিন্যাসে যতই বৈচিত্র থাকুক, বাংলায় দুর্গোৎসবে প্রায় সর্বত্রই দেবী দুর্গা সপরিবারে পূজিতা হন। এই প্রসঙ্গে স্বামী প্রমেয়ানন্দের উক্তিটি স্মরণীয়ঃ


...ধনদাত্রী লক্ষ্মী, বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী, শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিকেয়, সিদ্ধিদাতা গণেশ ও তাঁদের বাহন-সকলের মূর্তিসহ মহামহিমময়ী দুর্গামূর্তির পরিকল্পনা ও পূজা বাংলার নিজস্ব।

দুর্গা

হিন্দু শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা নিম্নোক্তরূপে প্রদত্ত হয়েছে :



দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।

উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।



- ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে এই দেবীই ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’ বা সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি।

সিংহ

উত্তর কলকাতার কাশীপুরের একটি মণ্ডপে তাপসীবেশে সিংহবাহিনী মহিষাসুরমর্দিনী

দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে দেবীর বাহন ‘বাহনকেশরী’, ‘ধূতসট’ প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত হয়েছে। দুর্গোৎসব কালে সিংহেরও পূজা কর্তব্য বলে গণ্য হয়।

সিংহ রজোগুণের এক প্রচণ্ড শক্তির উচ্ছ্বাসের প্রতীক। স্বামী নির্মলানন্দ বলেছেন,


সত্ত্বগুণের অনুগত হলে সেই শক্তি লোকস্থিতির সহায়ক হয়ে ওঠে। ... (সিংহ) আসুরিকতা ও পাশবিকতার উচ্ছেদ সাধনপূর্বক দেবীর লোকস্থিতিমূলক পূণ্য কর্মের সহায়কারী।

এছাড়াও সিংহ মানুষের পশুত্ববিজয়েরও প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দ লিখেছেন,


প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে পশুশক্তি। পুরুষকার ও সাধন-ভজনের দ্বারা মানুষ যখন যথার্থ মনুষ্যত্বে উপনীত হয় তখন তার পশুভাব কেটে গিয়ে দেবভাব জাগ্রত হয়। আর তখনই সে প্রকৃত শরণাগত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে, সার্থক জীবনের অধিকারী হয়। দেবীর চরণতলে সিংহ সেই ভাবেরই প্রতীক।

মহিষাসুর

বেহালার ২৯ পল্লির থিম পূজামণ্ডপে দেবীপ্রতিমায় বাঁকুড়া জেলার লোকশিল্পের ছোঁয়া, ২০০৭

মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দের ভাষায়,


সাধকের পক্ষে অসুর অবিদ্যা। বিদ্যারূপিণী মা অবিদ্যা বিনাশ করে মহামুক্তির বিধান করেন। সাধারণ মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, ভয়-ভীতি, আপদ-বিপদ – এ-সকলই আসুরিক শক্তির কার্য। পরমকরুণাময়ী মা নিরন্তর অসুর বিনাশ করে সন্তানের কল্যাণ বিধান করছেন।

তবে অসুর হলেও দুর্গোৎসবে মহিষাসুরেরও পূজার চল আছে। কালিকা পুরাণ অনুসারে, মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে নিজের মৃত্যুদৃশ্য স্বপ্নে দেখে ভীত মহিষাসুর ভদ্রকালীকে তুষ্ট করেছিলেন। ভদ্রকালী তাঁকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিলেও তাঁর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বরদান করতে ইচ্ছুক হন। মহিষাসুর দেবতাদের যজ্ঞভাগ বর চাইলে দেবী সেই বর দিতে অস্বীকৃত হন; কিন্তু মহিষাসুরকে এই বর দেন যে যেখানেই দেবী পূজিতা হবেন, সেখানেই তাঁর চরণতলে মহিষাসুরেরও স্থান হবে।

গণেশ

গণেশ সিদ্ধির দেবতা। পুরাণ অনুসারে, তিনি সর্বাগ্রপূজ্য। গণেশের পূজা না করে অপর কোনও দেবতার পূজা করার বিধান নেই। স্বামী প্রমেয়ানন্দের ভাষায়,


গণশক্তি যেখানে ঐক্যবদ্ধ সেখানে কর্মের সকল প্রকার বাধাবিঘ্ন দূরীভূত হয়। দেবাসুর-যুদ্ধে দেবতারা যতবারই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসুরদের সঙ্গে লড়াই করেছেন ততবারই তাঁরা জয়ী হয়েছেন। গণেশের আর এক নাম বিঘ্নেশ, অর্থাৎ বিঘ্ননাশকারী। বিঘ্নেশ প্রসন্ন থাকলে সিদ্ধি নিশ্চিত।
বেহালার একটি পূজামণ্ডপে সনাতন বাঙালি ভাস্কর্যে সপরিবার দুর্গা, ২০০৭

মুষিক

গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর মায়া ও অষ্টপাশ ছেদনের প্রতীক। ব্রহ্মর্ষি শ্রীসত্যদেবের ভাষায়,


অথর্বশীর্ষের সায়নভাষ্যে উক্ত হইয়াছে মুষ্ণাতি অপহরতি কর্মফলানি ইতি মূষিকঃ। জীবের কর্মফলসমূহ অজ্ঞাতসারে অপহরণ করে বলিয়া ইহার নাম মূষিক। প্রবল প্রতিবন্ধকস্বরূপ কর্মফল বিদ্যমান থাকিতে সিদ্ধিলাভ হয় না। তাই, কর্মফল হরণের উপর সিদ্ধি প্রতিষ্ঠিত।

লক্ষ্মী


লক্ষ্মী শ্রী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যুদয়ের প্রতীক। শুধু ধনৈশ্বর্যই নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক। স্বামী নির্মলানন্দের ভাষায়,


ধন, জ্ঞান ও শীল – তিনেরই মহনীয় বিকাশ দেবী লক্ষ্মীর চরিত্রমাহাত্ম্যে। সর্বাত্মক বিকাশের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা বলেই তিনি কমলা। কমল বা পদ্মের ন্যায়ই তিনি সুন্দরী; তদীয় নেত্রদ্বয় পদ্মের ন্যায় আয়ত। তাঁর শুভ করে প্রস্ফুটিত পদ্মকুসুম; পদ্মবনেই তাঁর বসতি।

মহানামব্রত ব্রহ্মচারী অন্যদিকে সমুদ্রমন্থনে সমুদ্ভূতা দেবী লক্ষ্মীর মূর্তিতত্ত্বের অপর এক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন,


যাঁহারা বিচক্ষণ তাঁহারা ভূমি-প্রকৃতি কর্ষণ করিয়া শস্যধন আহরণ করেন, বন-প্রকৃতি অনুসন্ধান করিয়া ধন আহরণ করেন। খনি প্রকৃতি খনন করিয়া স্বর্ণধন সংগ্রহ করেন। এই সকলই সাগরমন্থন। ... এই সকল সাগর-মন্থনে ধনাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীর আবির্ভাব।

পেচক

মধ্য কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কের দুর্গাপ্রতিমায় নারীজাগরণের বার্তা, চালচিত্রে বাংলা তথা ভারতের মহীয়সী নারীগণ, ২০০৭

লক্ষ্মীর বাহন পেচক বা প্যাঁচা। রূপে ও গুণে অতুলনীয় এই দেবীর এমন কিম্ভূত বাহন কেন, সে নিয়ে বেশ কয়েকটি মত প্রচলিত। প্রথমেই স্মরণে রাখা কর্তব্য, হিন্দু শাস্ত্রে কোথাও পেচককে লক্ষ্মীর বাহনের মর্যাদা দান করা হয়নি। এই বিশ্বাস একান্তই বাঙালি লোকবিশ্বাস।

প্যাঁচা দিবান্ধ। মনে করা হয়, যাঁরা দিবান্ধ অর্থাৎ তত্ত্ববিষয়ে অজ্ঞ, তাঁরাই পেচকধর্মী। মানুষ যতকাল পেচকধর্মী থাকে ততদিনই ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে সে। মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর মতে,


পেচক মুক্তিকামী সাধককে বলে, সকলে যখন ঘুমায় তুমি আমার মতো জাগিয়া থাকো। আর সকলে যখন জাগ্রত তখন তুমি আমার মতো ঘুমাইতে শিখ, তবেই সাধনে সিদ্ধি। কৈবল্যধন লাভ।

পরমার্থধনাভিলাষী সাধক পেঁচার মতো রাত্রি জাগিয়া সাধন করে। লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্জনে থাকে। লক্ষ্মীমার বাহন রূপে আসন লইয়া পেচকের যে ভাষণ তাহা বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রকার সাধকের উপাদেয় সম্পদ।


সরস্বতী

দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের দুর্গাপূজা, ২০০৫

সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী; তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক।


দেবীর হাতে পুস্তক ও বীণা। পুস্তক বেদ শব্দব্রহ্ম। বীণা সুরছন্দের প্রতীক নাদব্রহ্ম। শুদ্ধ সত্ত্বগুণের পূর্তি, তাই সর্বশুক্লা। শ্বেতবর্ণটি প্রকাশাত্মক। সরস্বতী শুদ্ধ জ্ঞানময়ী প্রকাশস্বরূপা। জ্ঞানের সাধক হইতে হইলে সাধককে হইতে হইবে দেহে মনে প্রাণে শুভ্র-শুচি।

হংস

সরস্বতীর বাহন হংস। হংস হিন্দুদের নিকট একটি পবিত্র প্রতীক।


সরস্বতী-ব্রহ্মবিদ্যা। যে সাধক দিবারাত্র অজপা মন্ত্রে সিদ্ধ তিনিই হংসধর্মী। মানুষ সুস্থ শরীরে দিবারাত্র মধ্যে একুশ হাজার ছয়শত ‘হংস’ এই অজপা মন্ত্রজপরূপে শ্বাস-প্রশ্বাস করিয়া থাকে। মানুষ যতদিন এই স্বাভাবিক জপ উপলব্ধি করিতে না পারে, ততদিন ‘হংসধর্মী’ হইতে পারে না; সুতরাং ব্রহ্মবিদ্যারও সন্ধান পায় না।

কার্তিকেয়

বেহালার জিতেন্দ্র স্মৃতি সংঘের জৌলুশপূর্ণ দেবীপ্রতিমা, ২০০৭

দেবসেনাপতি কার্তিকেয় বা কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক।


যুদ্ধে শৌর্য-বীর্য প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই সাধক-জীবনে এবং ব্যবহারিক জীবনে কার্তিকেয়কে প্রসন্ন করতে পারলে শৌর্য-বীর্য আমাদের করতলগত হয়...

ময়ূর

কার্তিকেয়ের বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য ও শৌর্য – কার্তিকেয়ের এই দুই বৈশিষ্ট্যই তাঁর বাহন ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান।

শিব

অন্যান্য মূর্তি

আচার ও অনুষ্ঠানসমূহ

চণ্ডীপাঠ

মহালয়া

দুর্গাষষ্ঠী

কল্পারম্ভ

বোধন

আমন্ত্রণ ও অধিবাস

সপ্তমীপূজা

নবপত্রিকা

অষ্টমীপূজা

কুমারী পূজা

সন্ধিপূজা

নবমীপূজা

দশমীপূজা

বিসর্জন ও বিজয়া দশমী কৃত্য

পূজা উদযাপন

পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতা

অন্যান্য স্থান

বাংলাদেশ

চিত্রকক্ষঃ বাংলাদেশে দুর্গোৎসব

দুর্গাপূজা বাংলাদেশ ও ভারতের অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ

দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হিন্দু দেবী দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হওয়া বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধানে আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষে এবং চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে দুর্গোৎসব পালন করা যায়। চৈত্র অর্থাৎ বসন্তকালের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা ও আশ্বিন অর্থাৎ শরৎকালের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। বাংলায় শারদীয়া দুর্গাপূজা অধিক জনপ্রিয়। যদিও অনেক পরিবারে বাসন্তী দুর্গোৎসব পালনের প্রথাও বর্তমান।

দুর্গাপূজা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্গত একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকলেও, এটি বিশেষ করে বাঙালিদের উৎসব হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় এই উৎসবের জাঁকজমক সর্বাধিক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ও বিশেষ উৎসাহে এই উৎসব পালন করে থাকেন। এমনকি অসম ও ওড়িশাতেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। বর্তমানকালে পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা কর্মসূত্রে অবস্থান করেন, সেখানেও মহাসমারোহে দুর্গোৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। এই কারণে সারা বিশ্বের কাছেই বর্তমানে বাংলার অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে দুর্গোৎসব। ২০০৬ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হল-এ ভয়েসেস অব বেঙ্গল সিজন নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসাবে বিরাট দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীবৃন্দ ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাৎ দশমী অবধি পাঁচ দিন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমীবিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে আখ্যাত হয়। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন অর্থাৎ পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজার দিন হিসাবে গণ্য হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি। পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোনও পরিবারে অবশ্য পনেরো দিনে দুর্গোৎসব পালনের প্রথা আছে। এক্ষেত্রে উৎসব মহালয়ার পূর্বপক্ষ অর্থাৎ পিতৃপক্ষের নবম দিন অর্থাৎ কৃষ্ণানবমীতে শুরু হয়ে থাকে। বিষ্ণুপুরের প্রাচীন রাজবাড়িতে আজও এই প্রথা বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় মহাসপ্তমী থেকে বিজয়া দশমী অবধি জাতীয় ছুটি ঘোষিত থাকে; এই ছুটি বাংলাদেশে কেবলমাত্র বিজয়া দশমীর দিনই পাওয়া যায়।

বর্তমানকালে দুর্গাপূজা দুইভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে – ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক স্তরে ও সমষ্টিগতভাবে পাড়া স্তরে। ব্যক্তিগত পূজাগুলি নিয়মনিষ্ঠা ও শাস্ত্রীয় বিধান পালনে বেশি আগ্রহী হয়; এগুলির আয়োজন মূলত বিত্তশালী বাঙালি পরিবারগুলিতেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে যৌথ উদ্যোগেও দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। এগুলি বারোয়ারি বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত। সর্বজনীন পূজার উদ্ভবের ইতিহাসের সঙ্গে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের ঐতিহ্য ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। আজকাল এই পূজাগুলিতে থিম পূজা অর্থাৎ, থিম ভিত্তিক মণ্ডপ ও প্রতিমা নির্মাণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

দুর্গাপূজা
বাগবাজার সার্বজনীনের দুর্গাপ্রতিমা, ২০১০
অপর নাম অকালবোধন, শারদোৎসব, বিজয়াদশমী, দশেরা
পালনকারী হিন্দু সম্প্রদায়
ধরন হিন্দু উৎসব
(প্রধানত বাংলা, অসম ও বিহারে উদযাপিত)
সূচনা সাধারণত মহাষষ্ঠী (ক্ষেত্রবিশেষে কুলাচার অনুসারে, ভাদ্রকৃষ্ণানবমী বা মহালয়া)
সমাপ্তি বিজয়াদশমী
তারিখ আশ্বিন শুক্লপক্ষ অথবা চৈত্র শুক্লপক্ষ
উদযাপন দিনসংখ্যা প্রথানুসারে পনেরো, দশ বা পাঁচ দিন
অনুষ্ঠান

শাস্ত্রীয়: দুর্গাষষ্ঠী: বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস;
মহাসপ্তমী: নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা;
মহাষ্টমী: মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমী ব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা;
সন্ধিপূজা ও বলিদান;
মহানবমী: কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা;
বিজয়াদশমী: বিজয়াদশমী বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়াদশমী কৃত্য ও কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা।


সামাজিক: পত্রপত্রিকার পূজাসংখ্যা প্রকাশ, মণ্ডপ পরিক্রমা, শারদ পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান, শিল্পপ্রদর্শনী ও সমাজসেবামূলক কাজকর্ম।
সংযোগ মহালয়া, দশেরা, জগদ্ধাত্রী পূজা


* দুর্গা পূজার পৌরাণিক উপাখ্যান
* দুর্গা পূজার ইতিহাস

দুর্গাপূজার পৌরাণিক উপাখ্যান

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লিখিত কিংবদন্তী অনুসারে দুর্গোৎসবের প্রবর্তক স্বয়ং কৃষ্ণ। এই পুরাণে দুর্গাপূজা প্রবর্তনের একটি ইতিহাস কথিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই ইতিহাস কোনও প্রামাণিক ইতিহাস নয়, বরং একটি পৌরাণিক সূচিমাত্র।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ লিখিত বিবরণ অনুসারেঃ


প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা। বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদ্যৌ গোলকে রাগমণ্ডলে।।
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তঃ। ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা।।
ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেন শাপাদ্দুর্বাসসঃ পুরা। চতুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী।।
তদা মুনীন্দ্রৈঃ সিদ্ধেন্দ্রৈর্দেবৈশ্চ মুনিমানবৈঃ। পূজিতা সর্ববিশ্বেষু বভূব সর্ব্বতঃ সদা।।

অর্থাৎ, সৃষ্টির আদিতে গোলকস্থ আদিবৃন্দাবনক্ষেত্রের মহারাসমণ্ডলে কৃষ্ণ সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন। দ্বিতীয়বার দুর্গার আরাধনা করেন মধুকৈটভ দৈত্যদ্বয়ের ভয়ে ভীত ব্রহ্মা। ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে যুদ্ধকালে সংকটাপন্ন মহাদেব তৃতীয়বার দুর্গাপূজা করেছিলেন। এরপর দুর্বাসা মুনির শাপে শ্রীভ্রষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যে দুর্গাপূজা করেন, তা ছিল চতুর্থ দুর্গোৎসব। এরপর থেকেই পৃথিবীতে মুনিগণ, সিদ্ধ ও দেবতাগণ এবং মানবগণ নানা দেশে নানা সময়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করে।

দেবী ভাগবত পুরাণ

দেবী ভাগবত অনুসারে ব্রহ্মা ও ইন্দ্রের ন্যায় ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু (ইনি পৌরাণিক চরিত্র, সংহিতাকার নন) পৃথিবীর শাসনভার পেয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মান করে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। এই সময়ে তিনি বাগ্ভব বীজ জপ করতেন ও আহার ও শ্বাসগ্রহণ পরিত্যাগ করে ভূতলে একপদে দণ্ডায়মান থেকে একশত বছর ধরে ঘোর তপস্যা করেন। তপঃপ্রভাবে অত্যন্ত শীর্ণ হয়ে পড়লেও মনু কামক্রোধ জয় করে হৃদয়ে দুর্গাচিন্তা করতে করতে সমাধির প্রভাবে স্থাবর হয়ে পড়লেন। তখন দুর্গা প্রীত হয়ে তাঁকে দর্শনদান পূর্বক বরদান করতে চাইলে মনু দেবদুর্লভ বর চাইলেন। মনুর প্রার্থনা শুনে দেবী দুর্গা বললেন, “হে মহাবাহো! তোমার প্রার্থনা সুসিদ্ধ হবে। আমি তোমাকে তোমার সকল প্রার্থনীয় বিষয় দান করছি। বৎস! তোমার রাজ্য নিষ্কণ্টক হোক; তুমি পুত্রলাভ কর।”

২০০৯ সালের বর্ধমানের একটি দুর্গা প্রতিমা

দেবীমাহাত্ম্যম্‌

দুর্গা ও দুর্গাপূজা সংক্রান্ত কাহিনিগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও লোকমান্য হল দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত কাহিনিটি। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি নির্বাচিত অংশ। বাংলায় সাধারণত শ্রীশ্রীচণ্ডী নামে পরিচিত সাতশত শ্লোকবিশিষ্ট এই দেবীমাহাত্ম্যম্ পাঠ দুর্গোৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও বটে। এই গ্রন্থে দুর্গাকে নিয়ে চারটি কাহিনি প্রচলিত আছে; তার মধ্যে একটি কাহিনি দুর্গোৎসব প্রচলনের এবং অপরাপর তিনটি কাহিনি দেবী দুর্গার মাহাত্ম্যকীর্তন সংক্রান্ত। ঐ তিনটি কাহিনিতে দুর্গাই কেন্দ্রীয় চরিত্র।
বৈষ্ণবী ও বারাহী দেবী শুম্ভ-নিশুম্ভের অসুরসৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধরতা, সপ্তদশ শতাব্দীর পুথিচিত্রণ

রাজা সুরথের কাহিনি

রাজা সুরথের কাহিনিটি প্রকৃতপক্ষে গ্রন্থের অবতারণার উপলক্ষ্যমাত্র। রাজা সুরথ ছিলেন সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর ও সুশাসক। কিন্তু একবার এক যুদ্ধে কতিপয় যবনের হাতে তাঁর পরাজয় ঘটে। সেই সুযোগে তাঁর প্রিয় অমাত্যগণ বলহীন রাজার ধনসম্পদ ও সেনা অধিকার করে নেন। রাজা মনের দুঃখে শিকারে যাবার ছলে বনে গমন করেন। বনে ভ্রমণ করতে করতে রাজা সুরথ মেধা ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। মুনি রাজাকে যথোচিত সমাদর করলেন ও আশ্রয় দিলেন। কিন্তু সেই তপোবনেও হৃতরাজ্যের ভালমন্দের চিন্তায় তাঁর হৃদয় শঙ্কিত হয়ে উঠতে লাগল। এমন সময় রাজা সমাধি নামক এক বৈশ্যের সাক্ষাৎ পেলেন তপোবনে। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে জানলেন, সেই বৈশ্যের অসাধু স্ত্রীপুত্রগণ তাঁর সর্বস্ব অধিকার করে তাঁকে পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু বৈশ্যও রাজার মতোই তাঁর পরিবারবর্গের শুভাশুভ আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে আছেন। তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগল, যাঁরা তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন করে পথের ভিক্ষুক বানিয়েছে তাঁদের প্রতি ক্রোধান্বিত না হয়ে কেন হৃদয়ে অনুকম্পার উদয় হচ্ছে। উভয়ে মেধা ঋষির সমীপে উপস্থিত হয়ে তাঁদের প্রশ্ন ব্যক্ত করলেন। মেধাঋষি তাঁদের বললেন পরমেশ্বরী শক্তি মহামায়ার প্রভাবেই এমন হচ্ছে। রাজা সুরথ তাঁকে মহামায়ার স্বরূপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি একে একে চণ্ডীপুস্তকে বর্ণিত দেবীমাহাত্ম্য সংক্রান্ত কাহিনিত্রয়ের উল্লেখ করলেন। গ্রন্থের শেষে আছে, ঋষির কাহিনি শুনে অনুপ্রাণিত রাজা ও বৈশ্য নদীতীরে তিনবছর কাল কঠোর তপশ্চর্যা অবলম্বন করে দুর্গোৎসব করলেন এবং শেষে দেবীর বরে রাজা হৃতরাজ্য ও বৈশ্য তত্ত্বজ্ঞান লাভ করলেন।

মধুকৈটভের কাহিনি

মধুকৈটভ বধরত নারায়ণ, সপ্তদশ শতাব্দীর পুথিচিত্রণ

শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে সংক্ষেপে মধুকৈটভের উপাখ্যানটি বর্ণিত হয়েছে : প্রলয়কালে পৃথিবী এক বিরাট কারণ-সমুদ্রে পরিণত হলে বিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্য নির্গত হয়ে বিষ্ণু নাভিপদ্মে স্থিত ব্রহ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভীত হয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্যে তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রার স্তব করতে লাগলেন। এই স্তবটি গ্রন্থে উল্লিখিত চারটি প্রধান স্তবমন্ত্রের অন্যতম। এই স্তবে সন্তুষ্টা দেবী বিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সঙ্গে মহাসংগ্রামে রত হলেন। মহামায়া শেষে ঐ দুই অসুরকে বিমোহিত করলে তারা বিষ্ণুকে বলে বসে, “আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা প্রীত; তাই আপনার হাতে মৃত্যু হবে আমাদের শ্লাঘার বিষয়। পৃথিবীর যে স্থান জলপ্লাবিত নয়, সেখানে আপনি আমাদের উভয়কে বিনাশ করতে পারেন।” বিষ্ণু বললেন, “তথাস্তু।” এবং অসুরদ্বয়ের মাথা নিজের জঙ্ঘার উপর রেখে তাদের বধ করলেন।

মহিষাসুরের কাহিনি

মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা, গুলের ঘরানার চিত্র, দ্রষ্টব্য এই চিত্রে দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী

শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে বর্ণিত দেবী দুর্গার কাহিনিগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় আবার গ্রন্থের মধ্যম চরিত্র বা দ্বিতীয় খণ্ডে উল্লিখিত মহিষাসুর বধের কাহিনিটি। এই কাহিনি অনুসারে : পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশতবর্ষব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে, বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাঁকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনি শ্রবণ করে তাঁরা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। সেই ক্রোধে তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব ও ব্রহ্মার মুখমণ্ডল হতে এক মহাতেজ নির্গত হল। সেই সঙ্গে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হল। সু-উচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত হওয়ায় এই দেবী কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হলেন। অন্য সূত্র থেকে জানা যায়, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দেবী কাত্যায়নী আবির্ভূতা হয়েছিলেন; শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কাত্যায়ন দেবীকে পূজা করেন এবং দশমীতে দেবী মহিষাসুর বধ করেন।

যাই হোক, এক এক দেবের প্রভাবে দেবীর এক এক অঙ্গ উৎপন্ন হল। প্রত্যেক দেবতা তাঁদের আয়ূধ বা অস্ত্র দেবীকে দান করলেন। হিমালয় দেবীকে তাঁর বাহন সিংহ দান করলেন। এই দেবীই অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন (শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে, মহালক্ষ্মী দেবী মহিষাসুর বধ করেন। ইনিই দুর্গা। তবে বাঙালিরা এঁকে দশভূজারূপে পূজা করে থাকেন)। দেবী ও তাঁর বাহনের সিংহনাদে ত্রিভুবন কম্পিত হতে লাগল।

মহিষাসুর সেই প্রকম্পনে ভীত হয়ে প্রথমে তাঁর সেনাদলের বীরযোদ্ধাদের পাঠাতে শুরু করলেন। দেবী ও তাঁর বাহন সিংহ প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করে একে একে সকল যোদ্ধা ও অসুরসেনাকে বিনষ্ট করলেন। তখন মহিষাসুর স্বয়ং দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। যুদ্ধকালে ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দেবীকে ভীত বা বিমোহিত করার প্রচেষ্টায় রত হলেন; কিন্তু দেবী সেই সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। তখন অসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করল। দেবী বললেন,


গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম। ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।।

- রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন।।

এই বলে দেবী লম্ফ দিয়ে মহিষাসুরের উপর চড়ে তাঁর কণ্ঠে পা দিয়ে শূলদ্বারা বক্ষ বিদীর্ণ করে তাকে বধ করলেন। অসুরসেনা হাহাকার করতে করতে পলায়ন করল এবং দেবতারা স্বর্গের অধিকার ফিরে পেয়ে আনন্দধ্বনি করতে লাগলেন।

শুম্ভ-নিশুম্ভের কাহিনি

দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত দেবী দুর্গা সংক্রান্ত তৃতীয় ও সর্বশেষ কাহিনিটি হল শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের কাহিনি। গ্রন্থের উত্তর চরিত্র বা তৃতীয় খণ্ডে বিধৃত পঞ্চম থেকে একাদশ অধ্যায়ে এই কাহিনি বর্ণিত হয়েছে : শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুরভ্রাতা স্বর্গ ও দেবতাদের যজ্ঞভাগ অধিকার করে নিলে দেবগণ হিমালয়ে গিয়ে বৈষ্ণবী শক্তি মহাদেবীকে স্তব করতে লাগলেন (পঞ্চম অধ্যায়ে উল্লিখিত এই স্তবটি অপরাজিতস্তব নামে পরিচিত; এটি হিন্দুদের নিকট অতিপবিত্র ও নিত্যপাঠ্য একটি স্তবমন্ত্র; “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা” ও সমরূপ মন্ত্রগুলি এই স্তবের অন্তর্গত)। এমন সময় সেই স্থানে পার্বতী গঙ্গাস্নানে উপস্থিত হলে, আদ্যাদেবী ইন্দ্রাদি দেবতার স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে তাঁর দেহকোষ থেকে নির্গত হলেন। এই দেবী কৌশিকী নামে আখ্যাত হলেন ও শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। শুম্ভ-নিশুম্ভের চর চণ্ড ও মুণ্ড তাঁকে দেখতে পেয়ে নিজ প্রভুদ্বয়কে বললেন যে এমন স্ত্রীলোক আপনাদেরই ভোগ্যা হবার যোগ্য। চণ্ড-মুণ্ডের কথায় শুম্ভ-নিশুম্ভ মহাসুর সুগ্রীবকে দৌত্যকর্মে নিযুক্ত করে দেবীর নিকট প্রেরণ করলেন। সুগ্রীব দেবীর কাছে শুম্ভ-নিশুম্ভের কুপ্রস্তাব মধুরভাবে ব্যক্ত করল। দেবী মৃদু হেসে বিনীত স্বরে বললেন, “তুমি সঠিকই বলেছ। এই বিশ্বে শুম্ভ-নিশুম্ভের বীর কে আছে? তবে আমি পূর্বে অল্পবুদ্ধিবশতঃ প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যে আমাকে যুদ্ধে পরাভূত করতে পারবে, কেবলমাত্র তাকেই আমি বিবাহ করব। এখন আমি প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করি কি করে! তুমি বরং মহাসুর শুম্ভ বা নিশুম্ভকে বল, তাঁরা যেন এখানে এসে আমাকে পরাস্ত করে শীঘ্র আমার পাণিগ্রহণ করেন। আর বিলম্বে কি প্রয়োজন?” সুগ্রীব ক্রোধান্বিত হয়ে দেবীকে নিরস্ত হতে পরামর্শ দিল। কিন্তু দেবী নিজবাক্যে স্থির থেকে তাকে শুম্ভ-নিশুম্ভের কাছে প্রেরণ করলেন।

দেবীর কথায় কুপিত হয়ে অসুররাজ শুম্ভ তাঁকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দৈত্যসেনাপতি ধূম্রলোচনকে প্রেরণ করলেন। ধূম্রলোচনের সঙ্গে দেবীর ভয়ানক যুদ্ধ হল ও সেই যুদ্ধে ধূম্রলোচন পরাজিত ও নিহত হল। এই সংবাদ পেয়ে শুম্ভ চণ্ড-মুণ্ড ও অন্যান্য অসুরসৈন্যদের প্রেরণ করল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দেবী নিজ দেহ থেকে দেবী কালীর সৃষ্টি করলেন। চামুণ্ডা ভীষণ যুদ্ধের পর চণ্ড-মুণ্ডকে বধ করলেন। তখন দেবী দুর্গা তাঁকে চামুণ্ডা আখ্যায় ভূষিত করলেন।

কলকাতার খিদিরপুরের ভেনাস ক্লাবে রামের অকালবোধন দৃশ্য

চণ্ড-মুণ্ডের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সকল দৈত্যসেনাকে সুসজ্জিত করে প্রেরণ করলেন দেবীর বিরুদ্ধে। তখন তাঁকে সহায়তার প্রত্যেক দেবতার শক্তি রূপ ধারণ করে রণক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন। এই দেবীরা হলেন ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ঐন্দ্রী প্রমুখ। এঁরা প্রচণ্ড যুদ্ধে দৈত্যসেনাদের পরাভূত ও নিহত করতে লাগলেন। এই সময় রক্তবীজ দৈত্য সংগ্রামস্থলে উপস্থিত হল। তার রক্ত একফোঁটা মাটিতে পড়লে তা থেকে লক্ষ লক্ষ রক্তবীজ দৈত্য সৃষ্টি হয়। এই কারণে দুর্গা কালীর সহায়তায় রক্তবীজকে বধ করলেন। কালী রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়তে না দিয়ে নিজে পান করে নেন।

এরপর শুম্ভ আপন ভ্রাতা নিশুম্ভকে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর দেবী দুর্গা নিশুম্ভকে বধ করলেন। প্রাণপ্রতিম ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে আকুল হয়ে শুম্ভ দেবীকে বলল, “তুমি গর্ব করো না, কারণ তুমি অন্যের সাহায্যে এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছ।” তখন দেবী বললেন,


একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মামপরা। পশ্যৈতা দুষ্ট মধ্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়ঃ।।

-একা আমিই এ জগতে বিরাজিত। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কে আছে? রে দুষ্ট, এই সকল দেবী আমারই বিভূতি। দ্যাখ্, এরা আমার দেহে বিলীন হচ্ছে।

তখন অন্যান্য সকল দেবী দুর্গার দেহে মিলিত হয়ে গেলেন। দেবীর সঙ্গে শুম্ভের ঘোর যুদ্ধ আরম্ভ হল। যুদ্ধান্তে দেবী শুম্ভকে শূলে গ্রথিত করে বধ করলেন। দেবতারা পুনরায় স্বর্গের অধিকার ফিরে পেলেন।

কৃত্তিবাসি রামায়ণ


মূল রামায়ণে রামচন্দ্রের দুর্গোৎসবের কোনও বিবরণ না থাকলেও, কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর বাংলা রামায়ণ পদ্যানুবাদে কালিকা পুরাণের ঘটনা সাজিয়ে রামচন্দ্রের দুর্গাপূজার চিত্র এঁকেছেন। কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুসারে রাবণ বধের জন্য ব্রহ্মা রামকে দুর্গোৎসবের পরামর্শ দিলে তিনি অকালে দেবীর বোধন ঘটান। অতঃপর দুর্গাষষ্টী, মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমী তিথিতে রীতিমতো চণ্ডীপাঠ করে তন্ত্রমতে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন রাম। নবমীতে ১০৮ নীলপদ্মযোগে পূজার আয়োজন করা হলে হনুমান সেই পদ্ম জোগাড় করেন। কিন্তু দেবী রামকে পরীক্ষা করার জন্য একটি পদ্ম মায়াবলে লুকিয়ে ফেলেন। পদ্ম না পেয়ে পদ্মলোচন রাম নিজের একচক্ষু উৎপাটনে উদ্যত দেবী তাঁকে দর্শন দেন ও রাবণবধের বরদান করেন।

কে ধরবে বাংলাদেশের হাল ?

বর্তমানে বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে কে পারবে হাল ধরতে । শীর্শ দুই দলের কারো পক্ষেই যে সম্ভব না তা অনেক আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে । বিরোধী দল সুযোগ খোঁজে হরতাল দেয়ার । সরকারী দল তা অযৌক্তিক বলে দাবি করে । আবার সরকারী দল বিরোধী দলে গেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় । এখনো দুই দলই সন্ত্রাসীদের ব্যাবহার করে একে অপরের উপর খোলামেলা ভাবে । হল দখল তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । হল দখল মানে দেশ দখলের সমান । কারণ ছাত্রদের দিয়ে যে কোন কাজ করানো যায় । কারণ ছাত্রদের চিন্তার গভীরতা থাকে কম । নেতারা যা বলবে ছাত্ররা তাই বড় ভাইয়ের জন্য করবে । পুলিশে ধরলে ছাত্রের বাপ থানায় গিয়ে সারারাত মশার কামড় খেয়ে ছেলে ছাড়িয়ে আনবে । নেতারা পরে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে "রাজনীতি করলে এমন হয় ।" এদিকে ঐ ছেলের পরিবার ধ্বংস । পুলিশের ঘুষ দিতে গিয়ে বাপের হয়ত ধার করতে হয়েছে । সেটা শোধ দিতে গিয়ে তার মাথা খারাপ হওয়ার দশা । ছেলে গালাগালি খেয়ে চিন্তা করে কিভাবে টাকা শোধ করা যায় । তখন কেউ কেউ হয়ত বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র । এরপর সে কোন একদিন পরে যায় অস্ত্র মামলায় । পড়াশোনা বন্ধ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আশা জলাঞ্জলি । ছেলে পালিয়ে বেড়ায় । মায়ের দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না । বাপ ছেলের নাম শুনতে পারে না । নেতারা এসময় মদ খায় জুয়া খেলে মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি করে । এরকম হাজার হাজার পরিবার আছে । যা সবাই জানে ।

শুধু তাই না প্রতিটা এলাকাতে ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও একজন দুইজন আহত বা নিহত হওয়ার খবর পত্রিকা টিভি চ্যানেল ছাড়াও অন্যান্য মিডিয়াগুলোতে পাওয়া যায় । আবার এইসব সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনে দিয়েই খোলামেলা ভাবে চলাফেরা করে । প্রশাসন নিশ্চুপ । কারণ ঐ সন্ত্রাসী হয় সরকারী অথবা বিরোধী দলের ।

এভাবেই চলছে আমাদের সোনার দেশ । তাহলে কে ধরিবে হাল কে তুলিবে পাল কে টানিবে দাঁড় কে দেখাবে পথ আর কে জ্বালাবে আলো । জিজ্ঞাস করলে দেখবেন সাহায্যের হাতের কোন অভাব নেই । বলবে আমি পারব আমি করব আমি জ্বালব আলো । তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখুন সন্ত্রাসী কালোবাজারি ঋণখেলাপি ও সুবিধাবাদি । সত্যিকারভাবে দেশ চালানোর যোগ্যতা আসলে কার আছে ? আপনি জানেন কি ? বলতে পারবেন একটি নাম ? মাত্র একটি নাম ।

পরিশেষে শুধু একটি কথাই বলতে চাই, তেমন যদি সত্যিই কেউ থেকে থাকেন দয়া করে সামনে আসুন । সাহস করে বলুন আমি পারব । জীবন যায় যাক আমি করব আমি পারব । আছেন কেউ তেমন বাপের ব্যাটা ! যদি থাকেন তবে দেখিয়ে দিন বুড়ো আঙ্গুল তুলে, বলে দিন তাদের ছাড়াও এখনো অনেকেই আছেন যারা চাইলেই তাদের চেয়ে হাজার গুণ ভাল দেশ চালাতে পারেন ।

রাজনীতির কারণে আমরা নিঃস্ব

সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান । বিক্ষোভ , সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, হরতাল, ভাংচুর, মারামারি, গোলাগুলি, যেন খুব সাধারন ঘটনা । Party যখন বিরোধী দলে থাকে তখন সরকারের প্রত্যেকটা পদক্ষেপেই বিরোধিতা করাটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর সরকারী দলে যে থাকে তার কাজই হল বিরোধী দলের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডই অযৌক্তিক প্রমান করা । এটাই হল এখনকার রাজনীতি । রাজনীতি বলতে আমরা এখন এছাড়া কিছু দেখতে পাই না । সবচেয়ে দুঃখের বিষয় আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই । বিরোধী দল এক সময় কি করেছে তা আমরা সবাই জানি । সরকারী দল এখন তার প্রতিশোধ নিচ্ছে । বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় আসবে তখন তারাও একই ভাবে প্রতিশোধ নিবে । তাহলে আমাদের দেশের রাজনীতি কি এখন তাহলে প্রতিশোধের রাজনীতিতে পরিণত হচ্ছে ? ঠিক তাই । দুই দলই এখন প্রতিশোধের রাজনীতিতে লিপ্ত । এই দুই দলের পক্ষে যখন Positive হওয়া সম্ভবই না তখন আমাদের ৩য় দলের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে । নইলে দেশ এখন যতটা বিপর্য্যের মধ্যে আছে তা আগামীতে বেড়ে চরমে পৌঁছুবে ।

আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের দাম কমছে সেখানে আমাদের দেশে ৩ মাসের মধ্যে দুইবার দাম বাড়ানো হল । গ্যাস তো আমাদের নিজস্ব সম্পদ । তাহলে গ্যাসের দাম কেন বাড়ানো হল ? সরকার এমন দুটি পণ্যের দাম বাড়াল যার ফলে দেশের প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে । এই সময়ে তারা এমন কাজ কেন করল ? এটি খুব বড় একটি জিজ্ঞাসা । কারণ তারা নিশ্চয়ই জানে এতে দেশের কতটা ক্ষতি হবে । তারপরও তারা কাজটি করল । কেন ? এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া জায় না । নিশ্চয়ই না । আগামীকাল বিরোধী দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল । এতে ক্ষতিটা তো আমাদের হচ্ছে তাদের না । জনগণকেই এখন নিজের দেশ বাচাতে হবে । সরকার এবং বিরোধী দল কেউ আর এখন জনগণের জন্য নয় । তারা যা করছে তা তাদের নিজেদের সার্থেই । তাদের দলাদলিতে মরছে জনগণ । তাই আমি মনে করি জনগণের জন্য একটা বিরাট পরীক্ষা এই দেশকে বাঁচানো ।

ঢাকায় ভূমিকম্প ভারতের সিকিম ও নেপালে প্রাণহানি

* আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবারো ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা করছে বিশেষজ্ঞরা । ১৮ ই সেপ্টেম্বার সন্ধ্যা ৬ টা ৪২ মিনিটের দিকে বেশ প্রবল দুলুনি অনুভূত হয় । প্রায় ২ মিনিটের উপর সময় ধরে চলে এই ভূমিকম্প । ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিলেট, রাজশাহী সহ ৩২ টি স্থানে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় । আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিষ্ঠান USGS জানিয়েছে ঢাকা থেকে ৫০০ কিঃ মিঃ দূরে উত্তর-পুর্বে নেপাল সিমান্তের কাছে ভারতের সিকিম রাজ্যের রাজধানি গ্যাংটক থেকে ৬৪ কিঃ মিঃ উত্তর-পশ্চিমে প্রায় আড়াই মিনিট ধরে রিখটার স্কেলে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় । ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল সিকিমে মারাত্নক বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে । অনেকেই বলছে এই ভূমিকম্প আগের চেয়ে মারাত্নক ছিল । ঢাকায় এ ধরনের উঁচু মাত্রার ভূমিকম্প এই প্রথম । মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে ।



ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে ঝিগাতলার একটি ১১ তলা ভবনে ও বৈশাখী টেলিভিশন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে । লোকজন আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে । এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্রুত বিল্ডিং থেকে নামতে গিয়ে ৫ জন আহত হয়েছে । বগুড়ায় দেয়াল ধসে একজন মহিলা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে । এছাড়া অনেক স্থানে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে পড়ার খবর পাওয়া গেছে । তবে ঢাকাতে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া জায়নি । ভারতে ৩০ জন আহত এবং ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে ।

দেশে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে কি ধরনের ক্ষতি হবে ?

এই মূহুর্তে বড় ধরনের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের পক্ষে ক্ষতি এড়ানোর কোন পথ নেই । এটি হচ্ছে বাস্তব সত্য । বিশেষ করে চিকিৎসা ও উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও টেকনোলজি না থাকায় প্রচুর প্রাণহানি ঘটবে । শুধুমাত্র ঢাকাতেই ক্ষতিগ্রস্থদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার মত পর্যাপ্ত সেবাকেন্দ্র নেই । যা আছে তাতে যথেষ্ট ঔষধ ও লোকবল নেই । সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলেই শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং পুরান ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ ভবন মুহুর্তেই ধসে পড়বে । ১২৫ বছর আগে এই মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল । এরপর আর কোন বড় ধরনের ভূমিকম্প না হওয়ায় ভুগর্ভস্থ প্লেটে ইতিমধ্যে যে যথেষ্ট শক্তি সঞ্চিত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এখন থেকেই প্রস্ততি না নিলে বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো অসম্ভব হয়ে পড়বে । বুয়েটের শিক্ষক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ডঃ জি এম আনসারিও একই কথা বলেছেন । রাজউক সিটি কর্পরেশন একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে । ফলাফলে কাজ এগুচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে । তারা চিন্তা করতে করতেই সময় শেষ । এ অঞ্চলে শেষ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে মধুপুরে । ফলে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার মত শক্তি ইতিমধ্যেই সঞ্চিত হয়েছে । তাই এখন থেকেই প্রস্ততি নেয়া খুবই জরুরী । আমাদের দেশে প্রধান মন্ত্রী হাত না দেয়া পর্যন্ত কোন কাজই ঠিক মত এগোয় না । আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এই বিপর্যয় রোধে প্রধান মন্ত্রী নিশ্চয়ই তিনি তার হাত জনগণের দিকে বাড়িয়ে দিবেন অরাজনৈতিকভাবে মানবকল্যাণে ।


সর্বশেষ সংবাদঃ

* ভারতে ১৮ ও নেপালে ৫ জনের মৃত্যু । সরকারিভাবে ৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে ।
* সূত্রাপুরে ৫ তলা ভবন ৪ তলা ভবনের উপর হেলে পড়েছে । কেউ হতাহত হয়নি ।
* জয়পুরহাটে দেয়াল ধসে শিশুসহ ৪ জন আহত ।
* বাংলাদেশ ভূমিকম্প, সুনামি ও সাইক্লোনের জন্য ঝুকিপুর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে আছে ।
* ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবক গঠন করা হচ্ছে ।
* ৫০০ কিঃ মিঃ দূরে এত প্রবল ভূকম্পনের জন্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে ।
* আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবারো ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা করছে বিশেষজ্ঞরা ।
* ভারতের সিকিমে বিদ্যুত, টেলিফোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ।
* নেপালে ব্রিটিশ ভবন ধসে ১ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে ।
* নেপাল ও ভারতে মৃতের সংখ্যা ৫৪ তে দাড়িয়েছে ।

মাংসাশী উদ্ভিদ মানুষখেকো নয়

অনেকেরই ধারনা মানুষখেকো গাছ আছে । আফ্রিকাতে এসব গাছ পাওয়া যায় । যা মানুষ খেয়ে ফেলে । আদতে এরকম কোন গাছের অস্তিত্ব নেই । তবে কিছু গাছ আছে যা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে থাকে । তেমনি একটা গাছ হল ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ যা একধরণের মাংসাশী উদ্ভিদ । এটি বাংলাদেশের সিলেট জেলা ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই দেখতে পাওয়া যায় । এ উদ্ভিদটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার জলাভূমিতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় । পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। যেমনঃ

* ভেনাস ফাইট্র্যাপ
* ওয়াটারহুইল
* সূর্যশিশির
* কলসী উদ্ভিদ
* দক্ষিণ আমেরিকান কলসী উদ্ভিদ


বেঁচে থাকা আর নির্দিষ্ট কোন পরিবেশে বৃদ্ধির কারণে এ ধরণের উদ্ভিদ মাংসাশী হয়ে থাকে। বেঁচে থাকার জন্য সব উদ্ভিদকেই মাটি থেকে পানি এবং বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের উপস্থিতিতে এসব উপাদানের সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলিত হয়ে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন। এজন্য নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ মাটিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ সবচেয়ে ভালো জন্মে, কিন্তু মাংসাশী উদ্ভিদ জন্মে ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। এখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুব অল্প থাকে। যেসব গাছ মূল দিয়ে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারা এ পরিবেশের মাটিতে জন্মাতে পারেনা। বেঁচে থাকার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদরা অন্য একটি পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রাণীকে ফাঁদে আটকে ফেলে। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের পাতাগুলো এ কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

প্রথমত এসব উদ্ভিদ প্রাণীদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আকর্ষন করে। অন্যান্য প্রাণীর মত এসব উদ্ভিদ কাছে গিয়ে কোন কিছু শিকার করতে পারেনা। বরং শিকার কখন কাছে আসবে এজন্য তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য পোকামাকড় এবং অন্য প্রাণীদের আকর্ষণ করতে তাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। কোন কোন মাংসাশী উদ্ভিদ বাতাসে একধরণের গন্ধ ছড়ায় যা মাছি, মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ার মত পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। আবার কোন কোন উদ্ভিদ মাছি কিংবা অন্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করতে একধরণের পঁচা গন্ধ ছড়ায়। অনেক মাংসাশী উদ্ভিদের দেহে উজ্জ্বল রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের পাতার চারদিকে ছোট্ট মুক্তোদানার মত চকচকে কিছু জিনিসের আবরণে ঢাকা থাকে। এগুলো উজ্জ্বল রঙ এবং সুমিষ্ট গন্ধের সাহায্যে পোকামাকড়কে প্রলুদ্ধ করে। সুকৌশলে আটকে রাখা এসব ফাঁদে প্রাণীরা আটকা পড়ে।

মাংসাশী উদ্ভিদে সাধারণত দুই ধরণের ফাঁদ দেখা যায়। নড়াচাড়া করতে পারে এমন প্রত্যক্ষ ফাঁদ (Active Trap)। আর নড়াচাড়া করতে পারেনা এমন ফাঁদের নাম পরোক্ষ ফাঁদ (Passive Trap)। ফাঁদ যে ধরণেরই হোক না কেন সব ফাঁদই মাংসাশী উদ্ভিদকে পোকামাকড় ধরে খেতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি উদ্ভিদে আনেকগুলো ফাঁদ থাকে। সব ফাঁদই পোকামাকড় ধরা, পরিপাক করা আর পুষ্টি সংগ্রহের জন্য একযোগে কাজ করে।

ভেনাস ফাইট্র্যাপ, ওয়াটারহুইল ইত্যাদি উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ ফাঁদ আছে। তাদের উপর কোন পোকামাকড় বসামাত্রই ওরা কোন অঙ্গকে নাড়াচাড়া করে পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলে দেয়। দ্রুতবেগে নড়তে সক্ষম এসব অঙ্গগুলো একসঙ্গে দাঁতওয়ালা চোয়ালের মত কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের ফাঁদের দরজা আবার খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের গঠন

সম্পূর্ণ একটি উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট (৩০ সে.মি.)। বসন্তকালে এর লম্বা মাথার ওপর চমৎকার সাদা ফুল ফোটে। কিন্তু উদ্ভিদটির সবচেয়ে দর্শনীয় জিনিসটি হচ্ছে এর পাতা। ফাইট্র্যাপের সরু সবুজ পাতাগুলো উদ্ভিদটির গোড়ার চারপাশে জন্মে। প্রত্যেকটি পত্রফলক ঝিনুকের খোলসে মত দুইখন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রত্যেকটি খন্ডের মাঝখানে একটি মধ্যশিরা থাকে। খন্ড দুটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ ইঞ্চি (২.৫ সে.মি.)। খন্ড দুটির ভেতরের তল সাধারণত লাল রঙের হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি খন্ডের চারপাশের বাইরের প্রান্তে অসংখ্য শক্ত, সূচালো শুঙ্গ থাকে। এগুলোকে বলা হয় সিলিয়া। প্রত্যেকটি খন্ডের ভেতরের দিকে তিনটি ট্রিগার হেয়ার থাকে।

শিকারের পদ্ধতি

সিলিয়ার ভেতরের ট্রিগার হেয়ারগুলোই উদ্ভিদের ফাঁদ। এগুলো দেখতে পাতার মত। পাতার খন্ড দুটি খোলা অবস্থায় ফাঁদটি শিকার করার জন্য তৈরি থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ একটি মাকড়সা পাতার লাল রঙ আর পাতার কিনারায় থাকা মধুর মত মিষ্টি জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। মাকড়সাটি পাতার কিনারায় আসামাত্রই ট্রিগার হেয়ারগুলোতে টান পড়ে। তবে ফাঁদটি বন্ধ হওয়ার জন্য দুটি সঙ্কেতের প্রয়োজন। একটি ট্রিগার হেয়ার দু'বার স্পর্শ করলে ফাঁদটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। উদ্ভিটটি বুঝতে পারে যে, কোন ঘাস বা পাতার টুকরো নয় বরং কোন জ্যান্ত প্রাণী ফাঁদে আটকা পড়েছে। দু'বার সংকেত পেলেই পাতার খন্ড দুটি খুব দ্রুত মাকড়সাটির চারপাশে এসে বন্ধ হয়ে যায়। সিলিয়াগুলো একসাথে বন্ধ হয়ে পালানোর পথও বন্ধ করে দেয়। এ পর্যায়ে খুব ছোট্ট একটি মাকড়সা কিংবা পোকামাকড় সিলিয়ার ভেতর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে। উদ্ভিদটি এ ধরণের পোকামাকড়পকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। ফাঁদের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরই পাতার ভেতর থেকে এক ধরণের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। তরলের মধ্যে মাকড়সাটি ডুবে যায়। এ তরল পদার্থের মধ্যে থাকে পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচক। এগুলো মাকড়সার দেহটিকে এমন অবস্থাতে পরিণত করে ফেলে যা থেকে উদ্ভিটটি সহজেই পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। উৎসেচক যত বেশি পারিমাণে আসে মাকড়সার মৃতদেহের নরম অংশগুলোও ততই ধীরে ধীরে গলতে থাকে। ৮/১০ দিন পর মাকড়সাটির দেহের অংশগুলো নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ তরল পদার্থে পরিণত হয় যা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়ে যায়। মৃতদেহের যেসব শক্ত অংশগুলো উদ্ভিদটি হজম করতে পারেনি সেগুলো ফাঁদটি খুলে বের করে দেয়। ফাঁদ আবার আগের মত পেতে রাখা হয়। নষ্ট হয়ে যাবার আগে একটি ফাঁদ অন্তত তিনবার শিকার ধরে ফাইট্র্যাপ গাছকে সহায়তা করে।

ওয়াটারহুইল (উদ্ভিদ)

ওয়াটারহুইল এক প্রকার মাংসাশী উদ্ভিদ। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও আফ্রিকাতে এ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। আকারে ছোট, শিকড়হীন এ উদ্ভিদটি পুকুর বা জলাশয়ের উপরে ভাসতে দেখা যায়। এ উদ্ভিদটি সম্পূর্ণ ৪-১২ ইঞ্চি (১০-৩০ সে.মি.) লম্বা হয়। বসন্তকালে এতে ছোট্ট সাদা ফুল ফোটে। উদ্ভিদটির শিকার ধরার ফাঁদ পানির নিচে থাকে। প্রত্যেকটি উদ্ভিদের কতগুলো স্বচ্ছ পাতাসহ একটি সরু কান্ড থাকে। কান্ডের চারদিকে ৮ টি পাতা চাকা স্পোকের মত সাজানো থাকে বলে উদ্ভিদটিকে ওয়াটারহুইল বলা হয়।

এ উদ্ভিদের পাতাগুলোই ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। পাতাগুলো আকারে বেশ ছোট, দৈর্ঘ্যে মাত্র এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ (৬ মিলিমিটার)। আকারে খুব ছোট এদের শিকার গুলোও খুব ছোট হয়ে থাকে। এতে ধরা পড়ে উকুনের মত ছোট্ট এক ধরনের জলজ প্রাণী। প্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত আণীবীক্ষণিক জলজ প্রাণীকুল আর জলজ প্রাণীদের লার্ভা। ওয়াটার হুইলের পাতাগুলো কাজ করে পানির নিচের ভেনাস ফাইট্র্যাপের মত। এদের পাতা দুটি খন্ডে বিভক্ত। এখানে সারিবদ্ধভাবে শুঙ্গ সাজানো থাকে। আর খন্ডগুলোর মধ্যে থাকে ট্রিগার হেয়ার। একটি পোকা ফাঁদে প্রবেশ করলে পাতার খন্ড দুটি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াটারহুইল তখন শিকারকে পরিপাক করে ফেলে এবং পরবর্তী শিকার ধরার জন্য ফাঁদ আবারো প্রস্তুত হয়ে যায়।

কলসী উদ্ভিদ

কলসি উদ্ভিদকে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করা হয়। এর ইংরেজি নাম Pitcher plant. কলসি উদ্ভিদে ফাঁপা বিশেষ ধরনের পাতা রয়েছে যা একটি জগ কিংবা কলসির মত পানি ধারণ করে রাখতে পারে। কলসির মত দেখতে এ পাতাগুলোই শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এদের গঠন ও আকৃতি থেকেই এদেরকে নাম দেওয়া হয়েছে কলসি উদ্ভিদ।

পৃথিবীতে প্রায় ৮০ প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে একটি হলো দক্ষিণ আমেরিকান কলসি উদ্ভিদ (North American Pitcher Plant)। মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, ভারত ও শ্রীলংকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলাভূমিতেও বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ দেখা যায়।

গঠন ও আকৃতি

গ্রীষ্মমন্ডলীয় কলসি উদ্ভিদে সাধারণ পাতা এবং উজ্জ্বল রঙের কলসির মত পাতা দুটোই রয়েছে। একটি আকর্ষী থেকে ধীরে ধীরে সুতোর মত একটি পাতা উৎপন্ন হয়। পাতাটি বড় হতে হতে ফুলে উঠে রঙিন একটি জগের মত আকৃতি লাভ করে। এর ওপরের দিকে পাতার তৈরি একটি ঢাকনাও তৈরি হয়। কোন কোন কলসি উদ্ভিদে ঢাকনাটি কলসির কিনারে শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদের পাতাগুলোর আকার, রঙ ও আকৃতি ভিন্ন হতে পারে। এগুলোর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি (৫ সে.মি.) থেকে শুরু করে ২ ফুট (৬০ সে.মি.) পর্যন্ত হতে পারে।

শিকার পদ্ধতি

ছোট ছোট কলসি উদ্ভিদগুলো মাছি, গুবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড় শিকার করে। বড় আকারের কলসি উদ্ভিদগুলো ছোট আকারের ব্যাঙ কিংবা ইঁদুর শিকার করে। কিন্তু সব কলসি উদ্ভিদই এক পদ্ধতিতে শিকার করে। কলসি উদ্ভিদের ফাঁদ পরোক্ষ ধরনের। অর্থাৎ এরা কোন নাড়াচাড়া ছাড়াই শিকার ধরে থাকে। কলসি উদ্ভিদের গঠন এমন যে এর ভেতরে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া পোকামাকড়দের জন্য এটি বন্দিশালার মত কাজ করে। কলসের সঙ্গে আটকানো পাতাটি লম্বা নলের মত কাজ করে। নলের মাথায় থাকে রঙচঙে একটি প্রবেশ পথ। নলের তলদেশ অংশটি পেয়ালাকৃতির। যেসব কলসি উদ্ভিদ মাটির কাছাঁকাছি জন্মে তাদের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে থাকে। অধিকাংশ কলসি উদ্ভিদের ঢাকনাটি প্রবেশ পথ দিয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির পানি ঢুকতে বাধা দেয়। ঢাকনাটি সবসময় খোলা থাকে। কলসির প্রবেশ মুখে এক ধরনের মধু উৎপন্ন হয়। কলসির উজ্জ্বল রঙ আর মধুর লোভে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় ওড়ে কিংবা হামাগুড়ি দিয়ে কলসির ভিতরে প্রবেশ করে। ভেতরেই ঢুকে এটি মধু উৎপন্ন করে এবং আরো মধুর লোভে কলসির আরো ভিতরে ঢুকে যায়। পোকাটি কলসির নলের ভিতরেই ঢোকার পরই বিপদে পড়ে যায়। নলের ভিতরের দেয়ালটি বরফের মতই মসৃণ আর পিচ্ছিল। ফলে পোকাটি পিছলে গিয়ে নলের আরো তলের দিকে পড়ে যায়। নলের তলদেশে থাকে অসংখ্য শুঙ্গ। শুঙ্গগুলো সবই কলসির নিচে জমানো পানির দিকে ফেরানো থাকে। এগুলো পার হয়ে পোকাটি নিচে পড়ে গেলে তার পক্ষে আর আর ওপরের দিকে ওঠা সম্ভব হয়না। একসময় এটি তলদেশের পানিতে ডুবে যায়। এরপর পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচকগুলো কলসির তলদেশে বেরিয়ে আসে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো পরিপাক হয়ে উদ্ভিদের দেহে শোষিত হয়। শক্ত অংশগুলো কলসির নিচের তলদেশে জমা হয়।

সূর্যশিশির

সূর্যশিশির এক প্রকার মাংসাশী উদ্ভিদ। সূর্যশিশিরের পাতাগুলো ছোট আর গোলাকার। এ উদ্ভিদটি আঠালো ফাঁদওয়ালা মাংসাশী উদ্ভিদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলেই জলাভূমি অঞ্চলে এ উদ্ভিদ জন্মে। বাংলাদেশেও কোথাও কোথাও এ উদ্ভিদ দেখা যায়।

ছোট আকারের এ উদ্ভিদটি মাত্র ৩.৫ ইঞ্চি (৮ সে.মি.) চওড়া। এটি প্রায়ই বড় ধরণের আগাছা ও এর আশেপাশে জন্মানো গাছপালার নিচে লুকানো অবস্থায় থাকে। এর পাতাগুলো ছোট এবং গোলাকার। গ্রীষ্মকালে গোলাকার পাতাগুলোর উঁচু কান্ডগুলোতে সাদা সাদা ফুল ফোটে। সূর্যশিশিরের পাতাগুলোকে উজ্জ্বল লাল রঙের দেখায়। মনে হয় ওগুলোর উপর শিশির কণা চিকচিক করছে। লালচে শিশির বিন্দু দ্বারা আবৃত এ পাতাগুলো আসলে পোকামাকড় ধরার মরণ ফাঁদ। সূর্যশিশিরের পাতাগুলো বিভিন্ন উচ্চতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বোঁটা দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রত্যেকটি বোঁটার ওপর থাকে অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থি বা অঙ্গ যা এক ধরণের স্বচ্ছ আঠালো তরল পদার্থ উৎপন্ন করে। এ তরল পদার্থটি বোঁটাগুলোর ওপর শিশির বিন্দুর মত জমা হয়। তরল নিঃসরণকারী গ্রন্থিটি দেখতে লাল বলে এর ওপরের তরল পদার্থটিও লালচে বলে মনে হয়। সূর্যশিশির এক ধরণের সুগন্ধও বাতাসে ছড়ায়।

মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় উজ্জ্বল লাল রঙ, শিশির বিন্দু আর সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে উদ্ভিদের কাছে চলে আসে। কিন্তু পোকা গাছটির পাতার ওপর নামা মাত্রই পোকার পাগুলো পাতার উঁচু বোঁটায় থাকা তরল পদার্থে আটকে যায়। পা ছাড়িয়ে নিতে ওরা যতই টানাটানি করে ততই পাতার গ্রন্থিগুলো থেকে আরো বেশি করে আঠালো রস বের হতে থাকে। এভাবে পোকামাকড়গুলো আরো শক্তভাবে পাতায় আটকে যায়। পোকার চারপাশে থাকা বোঁটাগুলো বেঁকে গিয়ে আরো বেশি পরিমাণে রস বের করতে থাকে। সম্পূর্ণ পাতাটি কুঁচকে গিয়ে পোকাটির চারপাশে একটি পেয়ালার মত আকার গঠন করে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো গলে গিয়ে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত সূর্যশিশির উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমগুলো কাজ করে। ৪-৫ দিন পর সূর্যশিশিরের পাতা ও বোঁটাগুলো আবার আগের মত সোজা হয়ে যায়।

এই গরমে আপনার যা করণীয়

এখন গরমের সময় । ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি এবং লবণ শরীর থেকে বের হয়ে যায় । শরীরে পানি শূন্যতা সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় । তাই এ সময়ে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে আপনি থাকতে পারেন সুস্থ ।

১) প্রথম কথা প্রচুর পরিমাণে ফুটানো পানি খাবেন ( প্রায় ৫ লিটার ) । চায়ের দোকানের ফিল্টার পানি খাবেন না । কারণ তা সত্যিকারের ফিল্টার নাও হতে পারে ।

২) দুপুর বেলা ১ গ্লাস পানিতে সামান্য লেবু ও লবণ দিয়ে খাবেন । তাতে ভিটামিন সি ও লবণ পানির অভাব মিটবে ।

৩) বাহিরের কোন খোলা খাবার একেবারেই খাবেন না । যেমন – আখের রস । আখের গায়ে দেখবেন লাল ছত্রাক থাকে । এগুলো খেলে ছত্রাক জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ।

৪) ফুটপাতের সস্তা চা খাবেন না । লাশ যাতে না পচে তার জন্য ব্যবহার করা হয় চা । আর এই চা-ই অত্যন্ত সস্তায় কালবাজারে বিক্রি করা হয় । আপনি যে সেই চা-ই খাচ্ছেন না তা কি হলপ করে বলতে পারেন ?

৫) হোটেলের পুরি সিঙ্গারা জিলাপি না খাওয়াই ভাল । কারণ তারা পয়সা বাচাতে আগের দিনের তেল ব্যবহার করে । আর গরম তেল একবার ঠান্ডা হয়ে গেলে সেখানে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জমা হয় । পরে তা গরম দিলেও শরীরের জন্য বিষাক্ত হয় ।

৬) আর এই গরমে সব চাইতে ক্ষতিকর হল ধূমপান । কারণ ধূমপানের কারণে শরীরকে অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হয় । যার জন্য আপনাকে ভবিষ্যতে যথেষ্ট মুল্য দিতে হতে পারে ।

৭) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের জন্য ঠান্ডা খাবার খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ । কারণ খাবার ঠান্ডা হয়ার সাথে সাথেই ব্যাকটেরিয়া এসে জমা হতে শুরু করে । তাই খাবার বেশ ভালভাবে গরম করে খাবেন ।

৮) গরমে কখনই রাগ করবেন না বা উত্তেজিত হবেন না । তাহলে গরম বেশি লাগবে । তাছাড়াও অনেক মারাত্নক কিছুও হতে পারে । পৃথিবীতে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই উত্তেজিত অবস্থায় হয়ে থাকে ।

৯) গরমে ঘামের জন্য বিরক্ত হবেন না । ঘাম রক্ত বাঁচায় । শরীর থেকে জীবাণু বের করে দেয় ।

১০) যে জামা-কাপড় ঘামে ভিজে গেছে তা কখনই পরের দিন পরিধান করবেন না । কারণ ঘামের সাথে যে জীবাণু বের হয় তা কাপড়ের সাথে থেকে যায় । সবচেয়ে ভাল হয় ডেটলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে ।

১১) রোদের সময় সানগ্লাস এবং ধুলার জন্য মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করুন । কানের জন্যও এখন অনেক কিছু পাওয়া যায় । শহরে সুস্থ থাকতে হলে এগুলো খুব দরকার ।

১২) টাকা গুনে খাবারের আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোবেন । পুরনো নোটে প্রচুর জীবাণু থাকে । ঘাম থেকেই বেশি ছড়ায় ।

১৩) পাবলিক টয়লেটে মাস্ক এবং টিসু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন । গরমে অণুজীব খুব দ্রুত ছড়ায় ।

১৪) যাত্রীবাহী পুরনো বাসের সিটে প্রচুর জীবাণু থাকে । এসব বাসে চলাচল করার পর সাবান দিয়ে হাত-মুখ ভাল করে ধুয়ে নিবেন ।

১৫) মশাড়ি ছাড়া কখনই ঘুমাবেন না । কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমানো খুব বিপদজনক । এতে ফুসফুস সহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্তঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।

গরমে পরজীবীদের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় । তাই এসময় খুব সাবধানে থাকা প্রয়োজন । সামান্য অসাবধানতাই হাসপাতাল পর্যন্ত গড়াতে পারে ।

যৌথ পরিবারে যৌথ ভূমিকা

আমরা বাংলাদেশী । আমাদের দেশে যৌথ পরিবারের সংখ্যাই বেশি । বাবা-মা, ভাই-বন, চাচা-চাচি, খালা-খালু, শালা-শালি এবং বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা-কাচ্চা সহ আমরা একসাথে থাকি । ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, মন কষাকষি ছাড়াও নানান ঝামেলা যৌথ পরিবারের নিয়মিত ব্যাপার । তারপরও বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও প্রায় সব দেশেই কিছু না কিছু যৌথ পরিবার দেখা যায় । যৌথ পরিবারে সুবিধা অসুবিধা দুই আছে । কথায় আছে “একতাই বল।” এলাকাতে কোন যৌথ পরিবার থাকলে এবং তাদের মধ্যে যদি একতা বজায় থাকে, তবে সে পরিবারকে বাইরের কেউ সহজে ঘাটায় না । ঐ পরিবারের কেউ যদি বড় কিছু করে তবে অন্যদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে বা করার চেষ্টা থাকে । সবাই অন্যকে দেখেই শেখে । কাছের কেউ হলে শেখাটা সহজ এবং মজবুত হয় । আর তা যৌথ পরিবারেই সহজ হয় ।

যৌথ পরিবারে সবার মধ্যেই পজিটিভ গুণগুলো বেশি দেখা যায় । যেমন পরিবারের একজনের সাথে অন্যজনের কথা কাটাকাটি হল । ফলসরূপ কথা বন্ধ , কান্নাকাটি করে বুক ভাসানো বা চিৎকার করে প্রলাপ বকা বা গালাগালি ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন সাথে সাথেই পরিবারে দুটি দল তৈরি হয়ে যায় । এক দল একজনের পক্ষে অন্যদল অন্যজনের পক্ষে । আবার দুই দলেরও লিডার থাকে যারা বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরে এবং তাদের দলের ক্ষুদে সদস্যরা বিষয়গুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । এভাবে ছোটছোট বিষয় নিয়ে সারাদিনই চলে তোলপাড় হয় প্রচুর মজা । যেই সন্ধ্যা হল অমনি সবাই যে যার যার কাজে বা ঘরে যায় । যার পড়া আছে সে পড়তে বসে, যার রান্না আছে সে রান্না করে, কেউবা দেখে টিভি । সারাদিন কি হল তা নিয়ে আর কোন কথা না । পরিবার প্রধান বা কর্তা যখন বাসায় আসে তখন তাকে জানানো হয় সারাদিনের সব ঘটনা । তিনি সবাইকে ডাকবেন বুঝাবেন এবং একটি রায় দিবেন । কেউ কোন উচ্চ-বাচ্চ না করে মেনে নিবে । এটাই যৌথ পরিবারের অলিখিত নিয়ম ।

চলবে,,,

এই ঈদে আপনার যা করনীয়



আসছে ঈদে সবারই কম বেশি কেনা কাটা করা প্রয়োজন । বাবা-মা, ভাই-বোন, শশুর-শাশুড়ি, শালা-শালি এমনকি বাড়ির কাজের লোকের জন্যও কেনা-কাটা করতে হয় । এটা মুসলমানদের রেওয়াজ । পরিবারের সবাই
মিলে কেনা-কাটা করতে যাওয়ার মজাই আলাদা । এ সময় ছোটদের চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন । এ সময় বাচ্চা হারানোর মত অপ্রীতিকর ঘটনা পুরো ঈদকেই মাটি করে দিতে পারে । তাই সাবধান থাকুন ।


কেনা কাটা

(১) প্রথমত বাজেট নির্ধারণ করুন ।

(২) যা যা কিনতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করুন ।

(৩) সম্ভব হলে সবাই মিলে মার্কেটে যান । তাতে সময়টা আনন্দে কাটবে ।

(৪) কেনার সময় আগে জিনিস পছন্দ করুন । তারপর বাজেটের মধ্যে রেখে দামাদামি করুন । দাম পছন্দ না হলে অন্য দোকানে ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে দেখুন ।

(৫) প্রতিটা আইটেম কেনার পর বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন । কোনটাতে দাম বেড়ে গেলে বাজেটের সঙ্গে ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করুন ।

(৬) শেষ কথা হল কেনার সময় সবার সাথে পজিটিভ আচরণ করুন । রাগ হলেও চেপে গিয়ে মোলায়েম হাসি উপহার দিন । বলা যায় না, তাতে দাম কমেও যেতে পারে ।

গর্ভধারণ কি ?

গর্ভবতী নারী

মহিলাদের গর্ভে এক বা একাধিক ভ্রুন ধারন করাকে গর্ভধারণ বলে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানুষের গর্ভধারণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষনা করা হয়েছে। সাধারণত নিষেকের প্রায় ৩৭ সাপ্তাহ পর অথ্যৎ সর্বশেষ নিয়মিত রজঃস্রাবের প্রায় ৪০ সাপ্তাহ পর গর্ভবতি মহিলা সন্তান প্রসব করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুসারে ৩৭ সাপ্তাহ থেকে ৪২ সাপ্তাহ পর সন্তান প্রসব স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচিত।

ভ্রুনের বিকাশ


খাদ্যে ভ্যাজাল এবং আমাদের দুরাবস্থা

অধিক মুনাফার আশায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী খাবারে বিষাক্ত পদার্থ মেশাচ্ছে। বর্তমানে এমন কোনো পণ্য নেই যা ভেজালহীন। কারবাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা, পেঁপে, আপেল, আনার, কমলালেবু, মাল্টা, আনারস, আম, আঙ্গুর। তরল দুধ নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। একই কারণে মাছেও দেয়া হচ্ছে ফরমালিন । এই বিষক্রিয়ার ফলে সন্তান জন্ম নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সমস্যা নিয়ে ।

১. মাছ কিনতে গেলে ফরমালিনের বিপদ আছে ।
২. চনা বুট ভাজিতে গত শতাব্দীর তেলের সংমিশ্রণ পাবেন ।
৩. মিনারেল যুক্ত পানি কিনে, নলকূপের পানি নিয়ে ঠকবেন ।
৪. বেগুনী, মরিচ, চমচমে কাপড়ের রং মিশ্রিত ভেজাল পাবেন ।
৫. ইফতারিতে শরবত পান করতে গেলে শরবতে ভেজাল পাবেন ।
৬. পাকা কলা কিনে ঘরে গিয়ে দেখবেন, গন্ধক যুক্ত কলা কিনে এনেছেন ।
৭. কমদামী ভোজ্য তেল কিনতে গিয়ে, পোড়া মবিলে উদর বরবাদ করবেন ।
৮. ইসবগুলের ভুষি খেতে গিয়ে, স-মিলের মরা কাঠের ভুষি খেয়ে জীবন হারাবেন ।
৯. বাচ্চার জীবন ধারণের জন্য তাজা দুধ পান করিয়েছেন, নিজেই জানেন না সেটাতে ফরমালিন ছিল ।
১০. বাচ্চার খুশির জন্য কেকের ক্রিম খাইয়েছেন, বুঝতেই পারেন নি সেটা সেকারিন ও অ-হজমী পাম অয়েল দিয়ে বানানো ।

পত্রিকা খুললেই চোখে পরে কার্বাইড মেশানো ফল বিক্রি হচ্ছে , রং মেশানো খাবার বিক্রি হচ্ছে ইত্যাদি । সরকারের এজেন্সিগুলো কমবেশী চেষ্টা করে যাচ্ছে এই অ্যাডাল্ট্রেট ফুড কন্ট্রোল করতে । কিন্তু পারছে কি ?
মোটের কথা ফরমালিন দিয়ে ফল পাঁকানো এটা এইসব অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত লোকদের মাথায় আসল কিভাবে ? খাবারে ভেজাল মেশানো এইরকম মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে প্রায় ১০ বছর যাবত ?

আমাদের দেশে ৩৫০ টার উপরে ঔষুধ কোম্পানি আছে । দেশের ফার্মামার্কেট হল বৈধভাবে সারে তিন হাজার কোটি টাকার আর আসল মার্কেট সারে পাচ হাজারকোটি টাকার । মানে সারে তিন হোয়াইট বাকী ২ হাজার কোটি টাকার ব্ল্যাক মার্কেট ।

এই হিসাব সাধারণত কাগজে কলমে সারে তিন ধরা হয় । যদি সারে পাচও ধরা হয় তবুও এই মার্কেটের চারভাগের একভাগেরও কিছুটা বেশি দখল করে আছে বাংলাদেশী ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি । আর বাকী তিনভাগ এই ৩৫০ টা কোম্পানী । অনেক কোম্পানী আছে যাদের ফ্যাক্টরীখুজে পাওয়া খুবই কঠিন ।

এই সমস্ত কোম্পানীকে বেচে থাকতে হয় ঔষুধ বিক্রি করে । দেশের মানুষের যদি অসুখ না হয় তবে এরা বেচবে কি ?

আমরা জানি এইসব কোম্পানীর মার্কেটিং স্ট্রাটেজী । কত ডেসপারেট এরা হতে পারে । সার্ভাইব করার জন্য হেন কাজ নেই যে এরা করবেনা ।

যে সমস্ত উপায়ে খাবারে ভেজাল মিশানো হয়

* রাজধানীতে প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে গৃহীত ৫০ মেট্রিক টন শাকসবজির মধ্যে ৬০ ভাগই হচ্ছে কীটনাশক মেশানো

* মাছ ও দুধে সাধারণত ফরমালিন মেশানো হয় ।

* ভাজা খাবারে তেলের বদলে পোড়া লুব্রিকেটিং মানে পোরা মবিল । সয়াবিনে পামওয়েলের ব্যাপার তো পুরোনো এবং আমাদের অনেকটা অ্যাডজাষ্ট হয়ে যাবার মতন হয়েছে । যারা বাইক চালান তারা ভালো বুঝবেন । প্রতি মাসে মবিল পাল্টানোর সময় যে মবিলটা ফেলে দিয়ে আসেন সেইটা দিয়ে বিস্কুট , জিলাপী ইত্যাদি জিনিষ ভাজা হয় । এতে ভাজলে তা সহজে নরম হয়ে যায়না -- দীর্ঘক্ষন টনটনে থাকে । ঐ পোরামবিল দিয়ে ভাজলে তার এফেক্ট এমন হয় এই অশিক্ষিত লোকজন জানল কিভাবে ?

* ফুডগ্রেডের বদলে টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রঙ ব্যাবহার করা হয় কাবারের ঔজ্জল্য ধরে রাখতে । পেয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ কিংবা জিলাপীতে ব্যবহৃত হয় টেক্সটাইলের কাপড়ের রং । নষ্ট ও মেয়াদোর্ত্তীর্ণ ডালকে গুড়ো করে বেশনের গুড়া তৈরী,যা দিয়ে বেগুনী বানানো হয় । অনেক মিষ্টি দোকানগুলোতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রং দিয়ে মিষ্টি তৈরী হচ্ছে ।

গত ১২ আগষ্ট,২০১০ এ বাকলিয়া থানাধীন মিয়াখান নগর এলাকায় গলির ভিতরে তিনটি নকল মসলার মিলের সন্ধান পেয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ . অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেমিক্যালের রং, কালো রং, চালের ভূষি, পঁচা মরিচ, পটকা মরিচ মিশ্রন করার সময় পটিয়া হরিখাইন এলাকার আনোয়ার হোসেন (৩৮), সোলেমান (২০) ও এনামুল হক (৩০) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। এ সময় ৪০ মণ ভেজাল মসলা ও মসলা তৈরীর উপকরণ জব্দ করা হয়।

* মুড়িকে আকারে বড় করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড ।

* চাল সাদা করতে ধান সিদ্ধ করার সময় ব্যবহৃত হচ্ছে ইউরিয়া সার ।

* তারপর আছে খোলাবাজারে চাপাতা । এইসব চাপাতার বেশীরবাগই হচ্ছে লাশের কফিনে ব্যবহৃত পুরানো চাপাতা । মৃত লাশকে তাজা রাখার জন্য কফিনে ব্যবহার করা হয় চাপাতা । যা কমদামে মার্কেটে ছাড়া হয় যা সেকারিন আর এক্সপায়ারড দুধ দিয়ে আমরা খাই ।

* এছারা বাচ্চাদের স্কুলের সামনে মিশ্রিত আচার, ঝালমুড়ি, আমড়া সব কিছুতেই কেমিক্যাল , রং দেওয়া হয় ।

* লটিয়া ও চিংড়ী মাছে লাল রং মেশানো হয় দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে । মুরগী মোরগ এমনকি দেশী মুরগীও পাথর খাইয়ে বাজারে নিয়ে আসে ওজনে বেশী হবার জন্যে । মাছের গায়ে রং । কেমনে আমরা এখনও বেঁচে আছি ? কেমনে বস্তির লোকজন বেঁচে আছে ?

* এর পর আছে কার্বাইড এর কথা । আপনি জান গ্রামে গন্জে যেখানে যত রিমোট এরিয়া আছে, কাউকে জিজ্ঞাসা করেন - ভাই কার্বাইড কি ? দেখবেন বলে দিয়েছে । মানে এমন অনেক অশিক্ষিত লোক পাবেন যারা আম , কলা পাকানোর কেমিক্যাল কার্বাইড চেনে । ফার্ষ্ট ওয়ার্ল্ডে এমন শিক্ষিত লোকও মনে হয় পাওয়া যাবেনা । কার্বাইডের পুরা নাম হল ক্যালসিয়াম কার্বাইড । এটা মূলত ব্যবহার হয় কারখানায় গ্যাস ঝালাইয়ের কাজে ।

এই যৌগের মধ্যে ক্যালসিয়াম সক্রিয় মৌলগুলোর মধ্যে অন্যতম । এর পারমানবিক সংখ্যা ২০। মানে ক্যালসিয়ামের একটি সক্রিয় যৌগ হলো ক্যালসিয়াম ও কার্বন নিয়ে গঠিত ক্যালসিয়াম কার্বাইড। এই রাসায়নিক পদার্থটিতে দুটি ক্ষতিকারক পদার্থ আর্সেনিক এবং ফসফরাস থাকে । মানে নলকূপ চেপে আপনার আর্সেনিক খাওয়ার কোনই দরকার নাই । খাবারের ভেজালের কারনে আপনি তা বিনা চেষ্টায় পাচ্ছেন ।

ইহা শুধু আমাদের স্বাস্থহানি নয় সুযোগ পাইলে জীবনও বিপন্ন করতে পারে। এবং আমি শুনছি এর ক্ষতি জেনেটিক কোডের মধ্যে মেসেজ ক্যারি করে যা বংশ পরম্পরায় চলে । মানে আপনার কার্বাইড খাওয়ার জন্যে আপনার সন্তান কার্বাইড যদিও না খায় ( অ্যাকসিডেন্টলী - কারন এই দেশে থাকবে কার্বাইড খাবেনা -- তাতো আর সম্ভব না ) এর এফেক্ট পাবে ।

কার্বাইড ব্যবহারের প্রথমেই এতে একটু পানির ছিটা দিতে হয়। আর ক্যালসিয়াম কার্বাইড জলীয় সংস্পর্শে এলেই অ্যাসিটিলিন গ্যাস নির্গত করে, যা পাকানোর সময় ফলের সাথে মিশে ক্ষতিকর ইথাইলিনে রূপান্তরিত হয়। অ্যাসিটিলিন ইথাইলিনে রূপান্তরিত হলে ফল খুব শিগগিরই পাকতে শুরু করে ।

মাত্র ১০-১২ ঘন্টায় কস্টি কাচা কলা পেঁকে লাল হয়ে যাবে । সন্ধ্যায় বা বিকালে কলা পেড়ে কার্বাইড মারলে সকালে বাজারে পাকা কলা নিয়ে হাজির হওয়া যায় ।

কলার কাঁদির নিচে কেরোসিনের ষ্টোভ জ্বালিয়ে হিট দিয়ে কলা পাকানো হচ্ছে। কেমিক্যাল মেশানো পানি ফলের গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে । হিট দিয়ে পাকানো কলার ভেতরের অংশ শক্ত হয়ে পড়ছে। এসব কলা একেবারেই স্বাদহীন । আবার আমে কার্বাইড দেয়ার ফলে আমের কষ ও ঘামের সঙ্গে এ পদার্থ মিশে তৈরি হচ্ছে এসিটাইলিন গ্যাস । এ গ্যাস তাপ সৃষ্টি করছে । এ তাপের ফলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে যাচ্ছে আম । আম,কলার দামের সাথে যোগ হচ্ছে এই কেরোসিন আর কার্বাইডেরও দাম ।

আম কলা পেপে কি না পাকানো হচ্ছে কার্বাইড দিয়ে ? আনারস বর করার জন্যে হরমোন ইনজেকশন হাকানো হচ্ছে আর তো কার্বাইড । এই অশিক্ষিত লোকেরা এই বিদ্যা পেল কোথায় আর এত কার্বাইড পায় কোথায় ? কারা দেয় ? খাবারে কার্বাইড মিশালে লাভ কার ?

সাধারণত খাদ্যবিজ্ঞানে ফলমূল পাকানোর জন্য কার্বাইড ব্যবহারের অনুমোদন আছে, তবে সেটারও মাত্রা আছে । অর্থাৎ ওই পরিমাণ কার্বাইড ব্যবহার করলে সাধারণত স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে না । তাছাড়া কার্বাইড ছাড়া ফলমূল পাকালে তা তাড়াতাড়ি পঁচে যায় বলে পৃথিবীতে পরিমিত কার্বাইড ব্যবহারের আইন আছে।

বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ৬(এ) ধারায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে । কেউ তা করলে তার ১৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে । দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে ।

* কার্বাইডের অস্তিত্ব শনাক্তের জন্য আড়তগুলোর আম ডিস্টিল ওয়াটারে ডুবিয়ে তাতে ক্যালসিয়াম ইনডিকেটর দেওয়া হয়। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম কিছুক্ষণ পর সবুজ রং ধারণ করে।

* ক্যালসিয়াম কার্বাইড বেশি পরিমাণে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে পাকস্থলি ও অন্ত্রনালিতে ক্যানসারও হতে পারে । কার্বাইড মিশ্রিত ফল খেলে পাকস্থলিতে প্রদাহ ও ঘা, বদহজম, পেটে গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয় ।

* বাজারে অ্যান্টি- আলসারেন্টের সেল ফিগার আর তার রাইজিং কার্ভ দেখেন । ডমপেরিডনের সেল ফিগার দেখেন । দেশের ভবিষ্যত টের পাবেন ।


চলবে ''''