Home | Menu | Poem | Jokes | Games | Science | Biography | Celibrity Video | Dictionary

কে ধরবে বাংলাদেশের হাল ?

বর্তমানে বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে কে পারবে হাল ধরতে । শীর্শ দুই দলের কারো পক্ষেই যে সম্ভব না তা অনেক আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে । বিরোধী দল সুযোগ খোঁজে হরতাল দেয়ার । সরকারী দল তা অযৌক্তিক বলে দাবি করে । আবার সরকারী দল বিরোধী দলে গেলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় । এখনো দুই দলই সন্ত্রাসীদের ব্যাবহার করে একে অপরের উপর খোলামেলা ভাবে । হল দখল তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । হল দখল মানে দেশ দখলের সমান । কারণ ছাত্রদের দিয়ে যে কোন কাজ করানো যায় । কারণ ছাত্রদের চিন্তার গভীরতা থাকে কম । নেতারা যা বলবে ছাত্ররা তাই বড় ভাইয়ের জন্য করবে । পুলিশে ধরলে ছাত্রের বাপ থানায় গিয়ে সারারাত মশার কামড় খেয়ে ছেলে ছাড়িয়ে আনবে । নেতারা পরে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে "রাজনীতি করলে এমন হয় ।" এদিকে ঐ ছেলের পরিবার ধ্বংস । পুলিশের ঘুষ দিতে গিয়ে বাপের হয়ত ধার করতে হয়েছে । সেটা শোধ দিতে গিয়ে তার মাথা খারাপ হওয়ার দশা । ছেলে গালাগালি খেয়ে চিন্তা করে কিভাবে টাকা শোধ করা যায় । তখন কেউ কেউ হয়ত বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র । এরপর সে কোন একদিন পরে যায় অস্ত্র মামলায় । পড়াশোনা বন্ধ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আশা জলাঞ্জলি । ছেলে পালিয়ে বেড়ায় । মায়ের দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না । বাপ ছেলের নাম শুনতে পারে না । নেতারা এসময় মদ খায় জুয়া খেলে মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি করে । এরকম হাজার হাজার পরিবার আছে । যা সবাই জানে ।

শুধু তাই না প্রতিটা এলাকাতে ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও একজন দুইজন আহত বা নিহত হওয়ার খবর পত্রিকা টিভি চ্যানেল ছাড়াও অন্যান্য মিডিয়াগুলোতে পাওয়া যায় । আবার এইসব সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনে দিয়েই খোলামেলা ভাবে চলাফেরা করে । প্রশাসন নিশ্চুপ । কারণ ঐ সন্ত্রাসী হয় সরকারী অথবা বিরোধী দলের ।

এভাবেই চলছে আমাদের সোনার দেশ । তাহলে কে ধরিবে হাল কে তুলিবে পাল কে টানিবে দাঁড় কে দেখাবে পথ আর কে জ্বালাবে আলো । জিজ্ঞাস করলে দেখবেন সাহায্যের হাতের কোন অভাব নেই । বলবে আমি পারব আমি করব আমি জ্বালব আলো । তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখুন সন্ত্রাসী কালোবাজারি ঋণখেলাপি ও সুবিধাবাদি । সত্যিকারভাবে দেশ চালানোর যোগ্যতা আসলে কার আছে ? আপনি জানেন কি ? বলতে পারবেন একটি নাম ? মাত্র একটি নাম ।

পরিশেষে শুধু একটি কথাই বলতে চাই, তেমন যদি সত্যিই কেউ থেকে থাকেন দয়া করে সামনে আসুন । সাহস করে বলুন আমি পারব । জীবন যায় যাক আমি করব আমি পারব । আছেন কেউ তেমন বাপের ব্যাটা ! যদি থাকেন তবে দেখিয়ে দিন বুড়ো আঙ্গুল তুলে, বলে দিন তাদের ছাড়াও এখনো অনেকেই আছেন যারা চাইলেই তাদের চেয়ে হাজার গুণ ভাল দেশ চালাতে পারেন ।

রাজনীতির কারণে আমরা নিঃস্ব

সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান । বিক্ষোভ , সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, হরতাল, ভাংচুর, মারামারি, গোলাগুলি, যেন খুব সাধারন ঘটনা । Party যখন বিরোধী দলে থাকে তখন সরকারের প্রত্যেকটা পদক্ষেপেই বিরোধিতা করাটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর সরকারী দলে যে থাকে তার কাজই হল বিরোধী দলের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডই অযৌক্তিক প্রমান করা । এটাই হল এখনকার রাজনীতি । রাজনীতি বলতে আমরা এখন এছাড়া কিছু দেখতে পাই না । সবচেয়ে দুঃখের বিষয় আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই । বিরোধী দল এক সময় কি করেছে তা আমরা সবাই জানি । সরকারী দল এখন তার প্রতিশোধ নিচ্ছে । বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় আসবে তখন তারাও একই ভাবে প্রতিশোধ নিবে । তাহলে আমাদের দেশের রাজনীতি কি এখন তাহলে প্রতিশোধের রাজনীতিতে পরিণত হচ্ছে ? ঠিক তাই । দুই দলই এখন প্রতিশোধের রাজনীতিতে লিপ্ত । এই দুই দলের পক্ষে যখন Positive হওয়া সম্ভবই না তখন আমাদের ৩য় দলের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে । নইলে দেশ এখন যতটা বিপর্য্যের মধ্যে আছে তা আগামীতে বেড়ে চরমে পৌঁছুবে ।

আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের দাম কমছে সেখানে আমাদের দেশে ৩ মাসের মধ্যে দুইবার দাম বাড়ানো হল । গ্যাস তো আমাদের নিজস্ব সম্পদ । তাহলে গ্যাসের দাম কেন বাড়ানো হল ? সরকার এমন দুটি পণ্যের দাম বাড়াল যার ফলে দেশের প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে । এই সময়ে তারা এমন কাজ কেন করল ? এটি খুব বড় একটি জিজ্ঞাসা । কারণ তারা নিশ্চয়ই জানে এতে দেশের কতটা ক্ষতি হবে । তারপরও তারা কাজটি করল । কেন ? এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া জায় না । নিশ্চয়ই না । আগামীকাল বিরোধী দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল । এতে ক্ষতিটা তো আমাদের হচ্ছে তাদের না । জনগণকেই এখন নিজের দেশ বাচাতে হবে । সরকার এবং বিরোধী দল কেউ আর এখন জনগণের জন্য নয় । তারা যা করছে তা তাদের নিজেদের সার্থেই । তাদের দলাদলিতে মরছে জনগণ । তাই আমি মনে করি জনগণের জন্য একটা বিরাট পরীক্ষা এই দেশকে বাঁচানো ।

ঢাকায় ভূমিকম্প ভারতের সিকিম ও নেপালে প্রাণহানি

* আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবারো ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা করছে বিশেষজ্ঞরা । ১৮ ই সেপ্টেম্বার সন্ধ্যা ৬ টা ৪২ মিনিটের দিকে বেশ প্রবল দুলুনি অনুভূত হয় । প্রায় ২ মিনিটের উপর সময় ধরে চলে এই ভূমিকম্প । ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিলেট, রাজশাহী সহ ৩২ টি স্থানে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় । আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিষ্ঠান USGS জানিয়েছে ঢাকা থেকে ৫০০ কিঃ মিঃ দূরে উত্তর-পুর্বে নেপাল সিমান্তের কাছে ভারতের সিকিম রাজ্যের রাজধানি গ্যাংটক থেকে ৬৪ কিঃ মিঃ উত্তর-পশ্চিমে প্রায় আড়াই মিনিট ধরে রিখটার স্কেলে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় । ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল সিকিমে মারাত্নক বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে । অনেকেই বলছে এই ভূমিকম্প আগের চেয়ে মারাত্নক ছিল । ঢাকায় এ ধরনের উঁচু মাত্রার ভূমিকম্প এই প্রথম । মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে ।



ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে ঝিগাতলার একটি ১১ তলা ভবনে ও বৈশাখী টেলিভিশন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে । লোকজন আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে । এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্রুত বিল্ডিং থেকে নামতে গিয়ে ৫ জন আহত হয়েছে । বগুড়ায় দেয়াল ধসে একজন মহিলা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে । এছাড়া অনেক স্থানে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে পড়ার খবর পাওয়া গেছে । তবে ঢাকাতে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া জায়নি । ভারতে ৩০ জন আহত এবং ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে ।

দেশে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে কি ধরনের ক্ষতি হবে ?

এই মূহুর্তে বড় ধরনের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের পক্ষে ক্ষতি এড়ানোর কোন পথ নেই । এটি হচ্ছে বাস্তব সত্য । বিশেষ করে চিকিৎসা ও উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও টেকনোলজি না থাকায় প্রচুর প্রাণহানি ঘটবে । শুধুমাত্র ঢাকাতেই ক্ষতিগ্রস্থদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার মত পর্যাপ্ত সেবাকেন্দ্র নেই । যা আছে তাতে যথেষ্ট ঔষধ ও লোকবল নেই । সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলেই শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং পুরান ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ ভবন মুহুর্তেই ধসে পড়বে । ১২৫ বছর আগে এই মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল । এরপর আর কোন বড় ধরনের ভূমিকম্প না হওয়ায় ভুগর্ভস্থ প্লেটে ইতিমধ্যে যে যথেষ্ট শক্তি সঞ্চিত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এখন থেকেই প্রস্ততি না নিলে বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো অসম্ভব হয়ে পড়বে । বুয়েটের শিক্ষক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ডঃ জি এম আনসারিও একই কথা বলেছেন । রাজউক সিটি কর্পরেশন একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে । ফলাফলে কাজ এগুচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে । তারা চিন্তা করতে করতেই সময় শেষ । এ অঞ্চলে শেষ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে মধুপুরে । ফলে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার মত শক্তি ইতিমধ্যেই সঞ্চিত হয়েছে । তাই এখন থেকেই প্রস্ততি নেয়া খুবই জরুরী । আমাদের দেশে প্রধান মন্ত্রী হাত না দেয়া পর্যন্ত কোন কাজই ঠিক মত এগোয় না । আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এই বিপর্যয় রোধে প্রধান মন্ত্রী নিশ্চয়ই তিনি তার হাত জনগণের দিকে বাড়িয়ে দিবেন অরাজনৈতিকভাবে মানবকল্যাণে ।


সর্বশেষ সংবাদঃ

* ভারতে ১৮ ও নেপালে ৫ জনের মৃত্যু । সরকারিভাবে ৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে ।
* সূত্রাপুরে ৫ তলা ভবন ৪ তলা ভবনের উপর হেলে পড়েছে । কেউ হতাহত হয়নি ।
* জয়পুরহাটে দেয়াল ধসে শিশুসহ ৪ জন আহত ।
* বাংলাদেশ ভূমিকম্প, সুনামি ও সাইক্লোনের জন্য ঝুকিপুর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে আছে ।
* ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবক গঠন করা হচ্ছে ।
* ৫০০ কিঃ মিঃ দূরে এত প্রবল ভূকম্পনের জন্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে ।
* আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবারো ভূমিকম্প হওয়ার আশংকা করছে বিশেষজ্ঞরা ।
* ভারতের সিকিমে বিদ্যুত, টেলিফোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ।
* নেপালে ব্রিটিশ ভবন ধসে ১ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে ।
* নেপাল ও ভারতে মৃতের সংখ্যা ৫৪ তে দাড়িয়েছে ।

মাংসাশী উদ্ভিদ মানুষখেকো নয়

অনেকেরই ধারনা মানুষখেকো গাছ আছে । আফ্রিকাতে এসব গাছ পাওয়া যায় । যা মানুষ খেয়ে ফেলে । আদতে এরকম কোন গাছের অস্তিত্ব নেই । তবে কিছু গাছ আছে যা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে থাকে । তেমনি একটা গাছ হল ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ যা একধরণের মাংসাশী উদ্ভিদ । এটি বাংলাদেশের সিলেট জেলা ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই দেখতে পাওয়া যায় । এ উদ্ভিদটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার জলাভূমিতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় । পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। যেমনঃ

* ভেনাস ফাইট্র্যাপ
* ওয়াটারহুইল
* সূর্যশিশির
* কলসী উদ্ভিদ
* দক্ষিণ আমেরিকান কলসী উদ্ভিদ


বেঁচে থাকা আর নির্দিষ্ট কোন পরিবেশে বৃদ্ধির কারণে এ ধরণের উদ্ভিদ মাংসাশী হয়ে থাকে। বেঁচে থাকার জন্য সব উদ্ভিদকেই মাটি থেকে পানি এবং বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের উপস্থিতিতে এসব উপাদানের সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলিত হয়ে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন। এজন্য নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ মাটিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ সবচেয়ে ভালো জন্মে, কিন্তু মাংসাশী উদ্ভিদ জন্মে ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। এখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুব অল্প থাকে। যেসব গাছ মূল দিয়ে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারা এ পরিবেশের মাটিতে জন্মাতে পারেনা। বেঁচে থাকার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদরা অন্য একটি পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রাণীকে ফাঁদে আটকে ফেলে। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের পাতাগুলো এ কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

প্রথমত এসব উদ্ভিদ প্রাণীদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আকর্ষন করে। অন্যান্য প্রাণীর মত এসব উদ্ভিদ কাছে গিয়ে কোন কিছু শিকার করতে পারেনা। বরং শিকার কখন কাছে আসবে এজন্য তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য পোকামাকড় এবং অন্য প্রাণীদের আকর্ষণ করতে তাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। কোন কোন মাংসাশী উদ্ভিদ বাতাসে একধরণের গন্ধ ছড়ায় যা মাছি, মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ার মত পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। আবার কোন কোন উদ্ভিদ মাছি কিংবা অন্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করতে একধরণের পঁচা গন্ধ ছড়ায়। অনেক মাংসাশী উদ্ভিদের দেহে উজ্জ্বল রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের পাতার চারদিকে ছোট্ট মুক্তোদানার মত চকচকে কিছু জিনিসের আবরণে ঢাকা থাকে। এগুলো উজ্জ্বল রঙ এবং সুমিষ্ট গন্ধের সাহায্যে পোকামাকড়কে প্রলুদ্ধ করে। সুকৌশলে আটকে রাখা এসব ফাঁদে প্রাণীরা আটকা পড়ে।

মাংসাশী উদ্ভিদে সাধারণত দুই ধরণের ফাঁদ দেখা যায়। নড়াচাড়া করতে পারে এমন প্রত্যক্ষ ফাঁদ (Active Trap)। আর নড়াচাড়া করতে পারেনা এমন ফাঁদের নাম পরোক্ষ ফাঁদ (Passive Trap)। ফাঁদ যে ধরণেরই হোক না কেন সব ফাঁদই মাংসাশী উদ্ভিদকে পোকামাকড় ধরে খেতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি উদ্ভিদে আনেকগুলো ফাঁদ থাকে। সব ফাঁদই পোকামাকড় ধরা, পরিপাক করা আর পুষ্টি সংগ্রহের জন্য একযোগে কাজ করে।

ভেনাস ফাইট্র্যাপ, ওয়াটারহুইল ইত্যাদি উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ ফাঁদ আছে। তাদের উপর কোন পোকামাকড় বসামাত্রই ওরা কোন অঙ্গকে নাড়াচাড়া করে পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলে দেয়। দ্রুতবেগে নড়তে সক্ষম এসব অঙ্গগুলো একসঙ্গে দাঁতওয়ালা চোয়ালের মত কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের ফাঁদের দরজা আবার খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের গঠন

সম্পূর্ণ একটি উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট (৩০ সে.মি.)। বসন্তকালে এর লম্বা মাথার ওপর চমৎকার সাদা ফুল ফোটে। কিন্তু উদ্ভিদটির সবচেয়ে দর্শনীয় জিনিসটি হচ্ছে এর পাতা। ফাইট্র্যাপের সরু সবুজ পাতাগুলো উদ্ভিদটির গোড়ার চারপাশে জন্মে। প্রত্যেকটি পত্রফলক ঝিনুকের খোলসে মত দুইখন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রত্যেকটি খন্ডের মাঝখানে একটি মধ্যশিরা থাকে। খন্ড দুটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ ইঞ্চি (২.৫ সে.মি.)। খন্ড দুটির ভেতরের তল সাধারণত লাল রঙের হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি খন্ডের চারপাশের বাইরের প্রান্তে অসংখ্য শক্ত, সূচালো শুঙ্গ থাকে। এগুলোকে বলা হয় সিলিয়া। প্রত্যেকটি খন্ডের ভেতরের দিকে তিনটি ট্রিগার হেয়ার থাকে।

শিকারের পদ্ধতি

সিলিয়ার ভেতরের ট্রিগার হেয়ারগুলোই উদ্ভিদের ফাঁদ। এগুলো দেখতে পাতার মত। পাতার খন্ড দুটি খোলা অবস্থায় ফাঁদটি শিকার করার জন্য তৈরি থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ একটি মাকড়সা পাতার লাল রঙ আর পাতার কিনারায় থাকা মধুর মত মিষ্টি জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। মাকড়সাটি পাতার কিনারায় আসামাত্রই ট্রিগার হেয়ারগুলোতে টান পড়ে। তবে ফাঁদটি বন্ধ হওয়ার জন্য দুটি সঙ্কেতের প্রয়োজন। একটি ট্রিগার হেয়ার দু'বার স্পর্শ করলে ফাঁদটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। উদ্ভিটটি বুঝতে পারে যে, কোন ঘাস বা পাতার টুকরো নয় বরং কোন জ্যান্ত প্রাণী ফাঁদে আটকা পড়েছে। দু'বার সংকেত পেলেই পাতার খন্ড দুটি খুব দ্রুত মাকড়সাটির চারপাশে এসে বন্ধ হয়ে যায়। সিলিয়াগুলো একসাথে বন্ধ হয়ে পালানোর পথও বন্ধ করে দেয়। এ পর্যায়ে খুব ছোট্ট একটি মাকড়সা কিংবা পোকামাকড় সিলিয়ার ভেতর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে। উদ্ভিদটি এ ধরণের পোকামাকড়পকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। ফাঁদের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরই পাতার ভেতর থেকে এক ধরণের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। তরলের মধ্যে মাকড়সাটি ডুবে যায়। এ তরল পদার্থের মধ্যে থাকে পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচক। এগুলো মাকড়সার দেহটিকে এমন অবস্থাতে পরিণত করে ফেলে যা থেকে উদ্ভিটটি সহজেই পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। উৎসেচক যত বেশি পারিমাণে আসে মাকড়সার মৃতদেহের নরম অংশগুলোও ততই ধীরে ধীরে গলতে থাকে। ৮/১০ দিন পর মাকড়সাটির দেহের অংশগুলো নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ তরল পদার্থে পরিণত হয় যা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়ে যায়। মৃতদেহের যেসব শক্ত অংশগুলো উদ্ভিদটি হজম করতে পারেনি সেগুলো ফাঁদটি খুলে বের করে দেয়। ফাঁদ আবার আগের মত পেতে রাখা হয়। নষ্ট হয়ে যাবার আগে একটি ফাঁদ অন্তত তিনবার শিকার ধরে ফাইট্র্যাপ গাছকে সহায়তা করে।

ওয়াটারহুইল (উদ্ভিদ)

ওয়াটারহুইল এক প্রকার মাংসাশী উদ্ভিদ। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও আফ্রিকাতে এ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। আকারে ছোট, শিকড়হীন এ উদ্ভিদটি পুকুর বা জলাশয়ের উপরে ভাসতে দেখা যায়। এ উদ্ভিদটি সম্পূর্ণ ৪-১২ ইঞ্চি (১০-৩০ সে.মি.) লম্বা হয়। বসন্তকালে এতে ছোট্ট সাদা ফুল ফোটে। উদ্ভিদটির শিকার ধরার ফাঁদ পানির নিচে থাকে। প্রত্যেকটি উদ্ভিদের কতগুলো স্বচ্ছ পাতাসহ একটি সরু কান্ড থাকে। কান্ডের চারদিকে ৮ টি পাতা চাকা স্পোকের মত সাজানো থাকে বলে উদ্ভিদটিকে ওয়াটারহুইল বলা হয়।

এ উদ্ভিদের পাতাগুলোই ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। পাতাগুলো আকারে বেশ ছোট, দৈর্ঘ্যে মাত্র এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ (৬ মিলিমিটার)। আকারে খুব ছোট এদের শিকার গুলোও খুব ছোট হয়ে থাকে। এতে ধরা পড়ে উকুনের মত ছোট্ট এক ধরনের জলজ প্রাণী। প্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত আণীবীক্ষণিক জলজ প্রাণীকুল আর জলজ প্রাণীদের লার্ভা। ওয়াটার হুইলের পাতাগুলো কাজ করে পানির নিচের ভেনাস ফাইট্র্যাপের মত। এদের পাতা দুটি খন্ডে বিভক্ত। এখানে সারিবদ্ধভাবে শুঙ্গ সাজানো থাকে। আর খন্ডগুলোর মধ্যে থাকে ট্রিগার হেয়ার। একটি পোকা ফাঁদে প্রবেশ করলে পাতার খন্ড দুটি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াটারহুইল তখন শিকারকে পরিপাক করে ফেলে এবং পরবর্তী শিকার ধরার জন্য ফাঁদ আবারো প্রস্তুত হয়ে যায়।

কলসী উদ্ভিদ

কলসি উদ্ভিদকে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করা হয়। এর ইংরেজি নাম Pitcher plant. কলসি উদ্ভিদে ফাঁপা বিশেষ ধরনের পাতা রয়েছে যা একটি জগ কিংবা কলসির মত পানি ধারণ করে রাখতে পারে। কলসির মত দেখতে এ পাতাগুলোই শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এদের গঠন ও আকৃতি থেকেই এদেরকে নাম দেওয়া হয়েছে কলসি উদ্ভিদ।

পৃথিবীতে প্রায় ৮০ প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে একটি হলো দক্ষিণ আমেরিকান কলসি উদ্ভিদ (North American Pitcher Plant)। মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, ভারত ও শ্রীলংকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলাভূমিতেও বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ দেখা যায়।

গঠন ও আকৃতি

গ্রীষ্মমন্ডলীয় কলসি উদ্ভিদে সাধারণ পাতা এবং উজ্জ্বল রঙের কলসির মত পাতা দুটোই রয়েছে। একটি আকর্ষী থেকে ধীরে ধীরে সুতোর মত একটি পাতা উৎপন্ন হয়। পাতাটি বড় হতে হতে ফুলে উঠে রঙিন একটি জগের মত আকৃতি লাভ করে। এর ওপরের দিকে পাতার তৈরি একটি ঢাকনাও তৈরি হয়। কোন কোন কলসি উদ্ভিদে ঢাকনাটি কলসির কিনারে শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদের পাতাগুলোর আকার, রঙ ও আকৃতি ভিন্ন হতে পারে। এগুলোর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি (৫ সে.মি.) থেকে শুরু করে ২ ফুট (৬০ সে.মি.) পর্যন্ত হতে পারে।

শিকার পদ্ধতি

ছোট ছোট কলসি উদ্ভিদগুলো মাছি, গুবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড় শিকার করে। বড় আকারের কলসি উদ্ভিদগুলো ছোট আকারের ব্যাঙ কিংবা ইঁদুর শিকার করে। কিন্তু সব কলসি উদ্ভিদই এক পদ্ধতিতে শিকার করে। কলসি উদ্ভিদের ফাঁদ পরোক্ষ ধরনের। অর্থাৎ এরা কোন নাড়াচাড়া ছাড়াই শিকার ধরে থাকে। কলসি উদ্ভিদের গঠন এমন যে এর ভেতরে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া পোকামাকড়দের জন্য এটি বন্দিশালার মত কাজ করে। কলসের সঙ্গে আটকানো পাতাটি লম্বা নলের মত কাজ করে। নলের মাথায় থাকে রঙচঙে একটি প্রবেশ পথ। নলের তলদেশ অংশটি পেয়ালাকৃতির। যেসব কলসি উদ্ভিদ মাটির কাছাঁকাছি জন্মে তাদের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে থাকে। অধিকাংশ কলসি উদ্ভিদের ঢাকনাটি প্রবেশ পথ দিয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির পানি ঢুকতে বাধা দেয়। ঢাকনাটি সবসময় খোলা থাকে। কলসির প্রবেশ মুখে এক ধরনের মধু উৎপন্ন হয়। কলসির উজ্জ্বল রঙ আর মধুর লোভে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় ওড়ে কিংবা হামাগুড়ি দিয়ে কলসির ভিতরে প্রবেশ করে। ভেতরেই ঢুকে এটি মধু উৎপন্ন করে এবং আরো মধুর লোভে কলসির আরো ভিতরে ঢুকে যায়। পোকাটি কলসির নলের ভিতরেই ঢোকার পরই বিপদে পড়ে যায়। নলের ভিতরের দেয়ালটি বরফের মতই মসৃণ আর পিচ্ছিল। ফলে পোকাটি পিছলে গিয়ে নলের আরো তলের দিকে পড়ে যায়। নলের তলদেশে থাকে অসংখ্য শুঙ্গ। শুঙ্গগুলো সবই কলসির নিচে জমানো পানির দিকে ফেরানো থাকে। এগুলো পার হয়ে পোকাটি নিচে পড়ে গেলে তার পক্ষে আর আর ওপরের দিকে ওঠা সম্ভব হয়না। একসময় এটি তলদেশের পানিতে ডুবে যায়। এরপর পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচকগুলো কলসির তলদেশে বেরিয়ে আসে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো পরিপাক হয়ে উদ্ভিদের দেহে শোষিত হয়। শক্ত অংশগুলো কলসির নিচের তলদেশে জমা হয়।

সূর্যশিশির

সূর্যশিশির এক প্রকার মাংসাশী উদ্ভিদ। সূর্যশিশিরের পাতাগুলো ছোট আর গোলাকার। এ উদ্ভিদটি আঠালো ফাঁদওয়ালা মাংসাশী উদ্ভিদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলেই জলাভূমি অঞ্চলে এ উদ্ভিদ জন্মে। বাংলাদেশেও কোথাও কোথাও এ উদ্ভিদ দেখা যায়।

ছোট আকারের এ উদ্ভিদটি মাত্র ৩.৫ ইঞ্চি (৮ সে.মি.) চওড়া। এটি প্রায়ই বড় ধরণের আগাছা ও এর আশেপাশে জন্মানো গাছপালার নিচে লুকানো অবস্থায় থাকে। এর পাতাগুলো ছোট এবং গোলাকার। গ্রীষ্মকালে গোলাকার পাতাগুলোর উঁচু কান্ডগুলোতে সাদা সাদা ফুল ফোটে। সূর্যশিশিরের পাতাগুলোকে উজ্জ্বল লাল রঙের দেখায়। মনে হয় ওগুলোর উপর শিশির কণা চিকচিক করছে। লালচে শিশির বিন্দু দ্বারা আবৃত এ পাতাগুলো আসলে পোকামাকড় ধরার মরণ ফাঁদ। সূর্যশিশিরের পাতাগুলো বিভিন্ন উচ্চতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বোঁটা দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রত্যেকটি বোঁটার ওপর থাকে অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থি বা অঙ্গ যা এক ধরণের স্বচ্ছ আঠালো তরল পদার্থ উৎপন্ন করে। এ তরল পদার্থটি বোঁটাগুলোর ওপর শিশির বিন্দুর মত জমা হয়। তরল নিঃসরণকারী গ্রন্থিটি দেখতে লাল বলে এর ওপরের তরল পদার্থটিও লালচে বলে মনে হয়। সূর্যশিশির এক ধরণের সুগন্ধও বাতাসে ছড়ায়।

মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় উজ্জ্বল লাল রঙ, শিশির বিন্দু আর সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে উদ্ভিদের কাছে চলে আসে। কিন্তু পোকা গাছটির পাতার ওপর নামা মাত্রই পোকার পাগুলো পাতার উঁচু বোঁটায় থাকা তরল পদার্থে আটকে যায়। পা ছাড়িয়ে নিতে ওরা যতই টানাটানি করে ততই পাতার গ্রন্থিগুলো থেকে আরো বেশি করে আঠালো রস বের হতে থাকে। এভাবে পোকামাকড়গুলো আরো শক্তভাবে পাতায় আটকে যায়। পোকার চারপাশে থাকা বোঁটাগুলো বেঁকে গিয়ে আরো বেশি পরিমাণে রস বের করতে থাকে। সম্পূর্ণ পাতাটি কুঁচকে গিয়ে পোকাটির চারপাশে একটি পেয়ালার মত আকার গঠন করে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো গলে গিয়ে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত সূর্যশিশির উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমগুলো কাজ করে। ৪-৫ দিন পর সূর্যশিশিরের পাতা ও বোঁটাগুলো আবার আগের মত সোজা হয়ে যায়।

এই গরমে আপনার যা করণীয়

এখন গরমের সময় । ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি এবং লবণ শরীর থেকে বের হয়ে যায় । শরীরে পানি শূন্যতা সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় । তাই এ সময়ে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে আপনি থাকতে পারেন সুস্থ ।

১) প্রথম কথা প্রচুর পরিমাণে ফুটানো পানি খাবেন ( প্রায় ৫ লিটার ) । চায়ের দোকানের ফিল্টার পানি খাবেন না । কারণ তা সত্যিকারের ফিল্টার নাও হতে পারে ।

২) দুপুর বেলা ১ গ্লাস পানিতে সামান্য লেবু ও লবণ দিয়ে খাবেন । তাতে ভিটামিন সি ও লবণ পানির অভাব মিটবে ।

৩) বাহিরের কোন খোলা খাবার একেবারেই খাবেন না । যেমন – আখের রস । আখের গায়ে দেখবেন লাল ছত্রাক থাকে । এগুলো খেলে ছত্রাক জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ।

৪) ফুটপাতের সস্তা চা খাবেন না । লাশ যাতে না পচে তার জন্য ব্যবহার করা হয় চা । আর এই চা-ই অত্যন্ত সস্তায় কালবাজারে বিক্রি করা হয় । আপনি যে সেই চা-ই খাচ্ছেন না তা কি হলপ করে বলতে পারেন ?

৫) হোটেলের পুরি সিঙ্গারা জিলাপি না খাওয়াই ভাল । কারণ তারা পয়সা বাচাতে আগের দিনের তেল ব্যবহার করে । আর গরম তেল একবার ঠান্ডা হয়ে গেলে সেখানে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জমা হয় । পরে তা গরম দিলেও শরীরের জন্য বিষাক্ত হয় ।

৬) আর এই গরমে সব চাইতে ক্ষতিকর হল ধূমপান । কারণ ধূমপানের কারণে শরীরকে অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হয় । যার জন্য আপনাকে ভবিষ্যতে যথেষ্ট মুল্য দিতে হতে পারে ।

৭) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের জন্য ঠান্ডা খাবার খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ । কারণ খাবার ঠান্ডা হয়ার সাথে সাথেই ব্যাকটেরিয়া এসে জমা হতে শুরু করে । তাই খাবার বেশ ভালভাবে গরম করে খাবেন ।

৮) গরমে কখনই রাগ করবেন না বা উত্তেজিত হবেন না । তাহলে গরম বেশি লাগবে । তাছাড়াও অনেক মারাত্নক কিছুও হতে পারে । পৃথিবীতে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই উত্তেজিত অবস্থায় হয়ে থাকে ।

৯) গরমে ঘামের জন্য বিরক্ত হবেন না । ঘাম রক্ত বাঁচায় । শরীর থেকে জীবাণু বের করে দেয় ।

১০) যে জামা-কাপড় ঘামে ভিজে গেছে তা কখনই পরের দিন পরিধান করবেন না । কারণ ঘামের সাথে যে জীবাণু বের হয় তা কাপড়ের সাথে থেকে যায় । সবচেয়ে ভাল হয় ডেটলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে ।

১১) রোদের সময় সানগ্লাস এবং ধুলার জন্য মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করুন । কানের জন্যও এখন অনেক কিছু পাওয়া যায় । শহরে সুস্থ থাকতে হলে এগুলো খুব দরকার ।

১২) টাকা গুনে খাবারের আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধোবেন । পুরনো নোটে প্রচুর জীবাণু থাকে । ঘাম থেকেই বেশি ছড়ায় ।

১৩) পাবলিক টয়লেটে মাস্ক এবং টিসু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন । গরমে অণুজীব খুব দ্রুত ছড়ায় ।

১৪) যাত্রীবাহী পুরনো বাসের সিটে প্রচুর জীবাণু থাকে । এসব বাসে চলাচল করার পর সাবান দিয়ে হাত-মুখ ভাল করে ধুয়ে নিবেন ।

১৫) মশাড়ি ছাড়া কখনই ঘুমাবেন না । কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমানো খুব বিপদজনক । এতে ফুসফুস সহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্তঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।

গরমে পরজীবীদের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় । তাই এসময় খুব সাবধানে থাকা প্রয়োজন । সামান্য অসাবধানতাই হাসপাতাল পর্যন্ত গড়াতে পারে ।

যৌথ পরিবারে যৌথ ভূমিকা

আমরা বাংলাদেশী । আমাদের দেশে যৌথ পরিবারের সংখ্যাই বেশি । বাবা-মা, ভাই-বন, চাচা-চাচি, খালা-খালু, শালা-শালি এবং বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা-কাচ্চা সহ আমরা একসাথে থাকি । ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, মন কষাকষি ছাড়াও নানান ঝামেলা যৌথ পরিবারের নিয়মিত ব্যাপার । তারপরও বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও প্রায় সব দেশেই কিছু না কিছু যৌথ পরিবার দেখা যায় । যৌথ পরিবারে সুবিধা অসুবিধা দুই আছে । কথায় আছে “একতাই বল।” এলাকাতে কোন যৌথ পরিবার থাকলে এবং তাদের মধ্যে যদি একতা বজায় থাকে, তবে সে পরিবারকে বাইরের কেউ সহজে ঘাটায় না । ঐ পরিবারের কেউ যদি বড় কিছু করে তবে অন্যদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে বা করার চেষ্টা থাকে । সবাই অন্যকে দেখেই শেখে । কাছের কেউ হলে শেখাটা সহজ এবং মজবুত হয় । আর তা যৌথ পরিবারেই সহজ হয় ।

যৌথ পরিবারে সবার মধ্যেই পজিটিভ গুণগুলো বেশি দেখা যায় । যেমন পরিবারের একজনের সাথে অন্যজনের কথা কাটাকাটি হল । ফলসরূপ কথা বন্ধ , কান্নাকাটি করে বুক ভাসানো বা চিৎকার করে প্রলাপ বকা বা গালাগালি ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন সাথে সাথেই পরিবারে দুটি দল তৈরি হয়ে যায় । এক দল একজনের পক্ষে অন্যদল অন্যজনের পক্ষে । আবার দুই দলেরও লিডার থাকে যারা বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরে এবং তাদের দলের ক্ষুদে সদস্যরা বিষয়গুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । এভাবে ছোটছোট বিষয় নিয়ে সারাদিনই চলে তোলপাড় হয় প্রচুর মজা । যেই সন্ধ্যা হল অমনি সবাই যে যার যার কাজে বা ঘরে যায় । যার পড়া আছে সে পড়তে বসে, যার রান্না আছে সে রান্না করে, কেউবা দেখে টিভি । সারাদিন কি হল তা নিয়ে আর কোন কথা না । পরিবার প্রধান বা কর্তা যখন বাসায় আসে তখন তাকে জানানো হয় সারাদিনের সব ঘটনা । তিনি সবাইকে ডাকবেন বুঝাবেন এবং একটি রায় দিবেন । কেউ কোন উচ্চ-বাচ্চ না করে মেনে নিবে । এটাই যৌথ পরিবারের অলিখিত নিয়ম ।

চলবে,,,