Home | Menu | Poem | Jokes | Games | Science | Biography | Celibrity Video | Dictionary

এই ঈদে আপনার যা করনীয়



আসছে ঈদে সবারই কম বেশি কেনা কাটা করা প্রয়োজন । বাবা-মা, ভাই-বোন, শশুর-শাশুড়ি, শালা-শালি এমনকি বাড়ির কাজের লোকের জন্যও কেনা-কাটা করতে হয় । এটা মুসলমানদের রেওয়াজ । পরিবারের সবাই
মিলে কেনা-কাটা করতে যাওয়ার মজাই আলাদা । এ সময় ছোটদের চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন । এ সময় বাচ্চা হারানোর মত অপ্রীতিকর ঘটনা পুরো ঈদকেই মাটি করে দিতে পারে । তাই সাবধান থাকুন ।


কেনা কাটা

(১) প্রথমত বাজেট নির্ধারণ করুন ।

(২) যা যা কিনতে চান তার একটি তালিকা তৈরি করুন ।

(৩) সম্ভব হলে সবাই মিলে মার্কেটে যান । তাতে সময়টা আনন্দে কাটবে ।

(৪) কেনার সময় আগে জিনিস পছন্দ করুন । তারপর বাজেটের মধ্যে রেখে দামাদামি করুন । দাম পছন্দ না হলে অন্য দোকানে ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে দেখুন ।

(৫) প্রতিটা আইটেম কেনার পর বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন । কোনটাতে দাম বেড়ে গেলে বাজেটের সঙ্গে ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করুন ।

(৬) শেষ কথা হল কেনার সময় সবার সাথে পজিটিভ আচরণ করুন । রাগ হলেও চেপে গিয়ে মোলায়েম হাসি উপহার দিন । বলা যায় না, তাতে দাম কমেও যেতে পারে ।

গর্ভধারণ কি ?

গর্ভবতী নারী

মহিলাদের গর্ভে এক বা একাধিক ভ্রুন ধারন করাকে গর্ভধারণ বলে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানুষের গর্ভধারণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষনা করা হয়েছে। সাধারণত নিষেকের প্রায় ৩৭ সাপ্তাহ পর অথ্যৎ সর্বশেষ নিয়মিত রজঃস্রাবের প্রায় ৪০ সাপ্তাহ পর গর্ভবতি মহিলা সন্তান প্রসব করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুসারে ৩৭ সাপ্তাহ থেকে ৪২ সাপ্তাহ পর সন্তান প্রসব স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচিত।

ভ্রুনের বিকাশ


খাদ্যে ভ্যাজাল এবং আমাদের দুরাবস্থা

অধিক মুনাফার আশায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী খাবারে বিষাক্ত পদার্থ মেশাচ্ছে। বর্তমানে এমন কোনো পণ্য নেই যা ভেজালহীন। কারবাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা, পেঁপে, আপেল, আনার, কমলালেবু, মাল্টা, আনারস, আম, আঙ্গুর। তরল দুধ নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। একই কারণে মাছেও দেয়া হচ্ছে ফরমালিন । এই বিষক্রিয়ার ফলে সন্তান জন্ম নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সমস্যা নিয়ে ।

১. মাছ কিনতে গেলে ফরমালিনের বিপদ আছে ।
২. চনা বুট ভাজিতে গত শতাব্দীর তেলের সংমিশ্রণ পাবেন ।
৩. মিনারেল যুক্ত পানি কিনে, নলকূপের পানি নিয়ে ঠকবেন ।
৪. বেগুনী, মরিচ, চমচমে কাপড়ের রং মিশ্রিত ভেজাল পাবেন ।
৫. ইফতারিতে শরবত পান করতে গেলে শরবতে ভেজাল পাবেন ।
৬. পাকা কলা কিনে ঘরে গিয়ে দেখবেন, গন্ধক যুক্ত কলা কিনে এনেছেন ।
৭. কমদামী ভোজ্য তেল কিনতে গিয়ে, পোড়া মবিলে উদর বরবাদ করবেন ।
৮. ইসবগুলের ভুষি খেতে গিয়ে, স-মিলের মরা কাঠের ভুষি খেয়ে জীবন হারাবেন ।
৯. বাচ্চার জীবন ধারণের জন্য তাজা দুধ পান করিয়েছেন, নিজেই জানেন না সেটাতে ফরমালিন ছিল ।
১০. বাচ্চার খুশির জন্য কেকের ক্রিম খাইয়েছেন, বুঝতেই পারেন নি সেটা সেকারিন ও অ-হজমী পাম অয়েল দিয়ে বানানো ।

পত্রিকা খুললেই চোখে পরে কার্বাইড মেশানো ফল বিক্রি হচ্ছে , রং মেশানো খাবার বিক্রি হচ্ছে ইত্যাদি । সরকারের এজেন্সিগুলো কমবেশী চেষ্টা করে যাচ্ছে এই অ্যাডাল্ট্রেট ফুড কন্ট্রোল করতে । কিন্তু পারছে কি ?
মোটের কথা ফরমালিন দিয়ে ফল পাঁকানো এটা এইসব অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত লোকদের মাথায় আসল কিভাবে ? খাবারে ভেজাল মেশানো এইরকম মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে প্রায় ১০ বছর যাবত ?

আমাদের দেশে ৩৫০ টার উপরে ঔষুধ কোম্পানি আছে । দেশের ফার্মামার্কেট হল বৈধভাবে সারে তিন হাজার কোটি টাকার আর আসল মার্কেট সারে পাচ হাজারকোটি টাকার । মানে সারে তিন হোয়াইট বাকী ২ হাজার কোটি টাকার ব্ল্যাক মার্কেট ।

এই হিসাব সাধারণত কাগজে কলমে সারে তিন ধরা হয় । যদি সারে পাচও ধরা হয় তবুও এই মার্কেটের চারভাগের একভাগেরও কিছুটা বেশি দখল করে আছে বাংলাদেশী ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি । আর বাকী তিনভাগ এই ৩৫০ টা কোম্পানী । অনেক কোম্পানী আছে যাদের ফ্যাক্টরীখুজে পাওয়া খুবই কঠিন ।

এই সমস্ত কোম্পানীকে বেচে থাকতে হয় ঔষুধ বিক্রি করে । দেশের মানুষের যদি অসুখ না হয় তবে এরা বেচবে কি ?

আমরা জানি এইসব কোম্পানীর মার্কেটিং স্ট্রাটেজী । কত ডেসপারেট এরা হতে পারে । সার্ভাইব করার জন্য হেন কাজ নেই যে এরা করবেনা ।

যে সমস্ত উপায়ে খাবারে ভেজাল মিশানো হয়

* রাজধানীতে প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে গৃহীত ৫০ মেট্রিক টন শাকসবজির মধ্যে ৬০ ভাগই হচ্ছে কীটনাশক মেশানো

* মাছ ও দুধে সাধারণত ফরমালিন মেশানো হয় ।

* ভাজা খাবারে তেলের বদলে পোড়া লুব্রিকেটিং মানে পোরা মবিল । সয়াবিনে পামওয়েলের ব্যাপার তো পুরোনো এবং আমাদের অনেকটা অ্যাডজাষ্ট হয়ে যাবার মতন হয়েছে । যারা বাইক চালান তারা ভালো বুঝবেন । প্রতি মাসে মবিল পাল্টানোর সময় যে মবিলটা ফেলে দিয়ে আসেন সেইটা দিয়ে বিস্কুট , জিলাপী ইত্যাদি জিনিষ ভাজা হয় । এতে ভাজলে তা সহজে নরম হয়ে যায়না -- দীর্ঘক্ষন টনটনে থাকে । ঐ পোরামবিল দিয়ে ভাজলে তার এফেক্ট এমন হয় এই অশিক্ষিত লোকজন জানল কিভাবে ?

* ফুডগ্রেডের বদলে টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রঙ ব্যাবহার করা হয় কাবারের ঔজ্জল্য ধরে রাখতে । পেয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ কিংবা জিলাপীতে ব্যবহৃত হয় টেক্সটাইলের কাপড়ের রং । নষ্ট ও মেয়াদোর্ত্তীর্ণ ডালকে গুড়ো করে বেশনের গুড়া তৈরী,যা দিয়ে বেগুনী বানানো হয় । অনেক মিষ্টি দোকানগুলোতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রং দিয়ে মিষ্টি তৈরী হচ্ছে ।

গত ১২ আগষ্ট,২০১০ এ বাকলিয়া থানাধীন মিয়াখান নগর এলাকায় গলির ভিতরে তিনটি নকল মসলার মিলের সন্ধান পেয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ . অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেমিক্যালের রং, কালো রং, চালের ভূষি, পঁচা মরিচ, পটকা মরিচ মিশ্রন করার সময় পটিয়া হরিখাইন এলাকার আনোয়ার হোসেন (৩৮), সোলেমান (২০) ও এনামুল হক (৩০) কে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। এ সময় ৪০ মণ ভেজাল মসলা ও মসলা তৈরীর উপকরণ জব্দ করা হয়।

* মুড়িকে আকারে বড় করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড ।

* চাল সাদা করতে ধান সিদ্ধ করার সময় ব্যবহৃত হচ্ছে ইউরিয়া সার ।

* তারপর আছে খোলাবাজারে চাপাতা । এইসব চাপাতার বেশীরবাগই হচ্ছে লাশের কফিনে ব্যবহৃত পুরানো চাপাতা । মৃত লাশকে তাজা রাখার জন্য কফিনে ব্যবহার করা হয় চাপাতা । যা কমদামে মার্কেটে ছাড়া হয় যা সেকারিন আর এক্সপায়ারড দুধ দিয়ে আমরা খাই ।

* এছারা বাচ্চাদের স্কুলের সামনে মিশ্রিত আচার, ঝালমুড়ি, আমড়া সব কিছুতেই কেমিক্যাল , রং দেওয়া হয় ।

* লটিয়া ও চিংড়ী মাছে লাল রং মেশানো হয় দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে । মুরগী মোরগ এমনকি দেশী মুরগীও পাথর খাইয়ে বাজারে নিয়ে আসে ওজনে বেশী হবার জন্যে । মাছের গায়ে রং । কেমনে আমরা এখনও বেঁচে আছি ? কেমনে বস্তির লোকজন বেঁচে আছে ?

* এর পর আছে কার্বাইড এর কথা । আপনি জান গ্রামে গন্জে যেখানে যত রিমোট এরিয়া আছে, কাউকে জিজ্ঞাসা করেন - ভাই কার্বাইড কি ? দেখবেন বলে দিয়েছে । মানে এমন অনেক অশিক্ষিত লোক পাবেন যারা আম , কলা পাকানোর কেমিক্যাল কার্বাইড চেনে । ফার্ষ্ট ওয়ার্ল্ডে এমন শিক্ষিত লোকও মনে হয় পাওয়া যাবেনা । কার্বাইডের পুরা নাম হল ক্যালসিয়াম কার্বাইড । এটা মূলত ব্যবহার হয় কারখানায় গ্যাস ঝালাইয়ের কাজে ।

এই যৌগের মধ্যে ক্যালসিয়াম সক্রিয় মৌলগুলোর মধ্যে অন্যতম । এর পারমানবিক সংখ্যা ২০। মানে ক্যালসিয়ামের একটি সক্রিয় যৌগ হলো ক্যালসিয়াম ও কার্বন নিয়ে গঠিত ক্যালসিয়াম কার্বাইড। এই রাসায়নিক পদার্থটিতে দুটি ক্ষতিকারক পদার্থ আর্সেনিক এবং ফসফরাস থাকে । মানে নলকূপ চেপে আপনার আর্সেনিক খাওয়ার কোনই দরকার নাই । খাবারের ভেজালের কারনে আপনি তা বিনা চেষ্টায় পাচ্ছেন ।

ইহা শুধু আমাদের স্বাস্থহানি নয় সুযোগ পাইলে জীবনও বিপন্ন করতে পারে। এবং আমি শুনছি এর ক্ষতি জেনেটিক কোডের মধ্যে মেসেজ ক্যারি করে যা বংশ পরম্পরায় চলে । মানে আপনার কার্বাইড খাওয়ার জন্যে আপনার সন্তান কার্বাইড যদিও না খায় ( অ্যাকসিডেন্টলী - কারন এই দেশে থাকবে কার্বাইড খাবেনা -- তাতো আর সম্ভব না ) এর এফেক্ট পাবে ।

কার্বাইড ব্যবহারের প্রথমেই এতে একটু পানির ছিটা দিতে হয়। আর ক্যালসিয়াম কার্বাইড জলীয় সংস্পর্শে এলেই অ্যাসিটিলিন গ্যাস নির্গত করে, যা পাকানোর সময় ফলের সাথে মিশে ক্ষতিকর ইথাইলিনে রূপান্তরিত হয়। অ্যাসিটিলিন ইথাইলিনে রূপান্তরিত হলে ফল খুব শিগগিরই পাকতে শুরু করে ।

মাত্র ১০-১২ ঘন্টায় কস্টি কাচা কলা পেঁকে লাল হয়ে যাবে । সন্ধ্যায় বা বিকালে কলা পেড়ে কার্বাইড মারলে সকালে বাজারে পাকা কলা নিয়ে হাজির হওয়া যায় ।

কলার কাঁদির নিচে কেরোসিনের ষ্টোভ জ্বালিয়ে হিট দিয়ে কলা পাকানো হচ্ছে। কেমিক্যাল মেশানো পানি ফলের গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে । হিট দিয়ে পাকানো কলার ভেতরের অংশ শক্ত হয়ে পড়ছে। এসব কলা একেবারেই স্বাদহীন । আবার আমে কার্বাইড দেয়ার ফলে আমের কষ ও ঘামের সঙ্গে এ পদার্থ মিশে তৈরি হচ্ছে এসিটাইলিন গ্যাস । এ গ্যাস তাপ সৃষ্টি করছে । এ তাপের ফলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে যাচ্ছে আম । আম,কলার দামের সাথে যোগ হচ্ছে এই কেরোসিন আর কার্বাইডেরও দাম ।

আম কলা পেপে কি না পাকানো হচ্ছে কার্বাইড দিয়ে ? আনারস বর করার জন্যে হরমোন ইনজেকশন হাকানো হচ্ছে আর তো কার্বাইড । এই অশিক্ষিত লোকেরা এই বিদ্যা পেল কোথায় আর এত কার্বাইড পায় কোথায় ? কারা দেয় ? খাবারে কার্বাইড মিশালে লাভ কার ?

সাধারণত খাদ্যবিজ্ঞানে ফলমূল পাকানোর জন্য কার্বাইড ব্যবহারের অনুমোদন আছে, তবে সেটারও মাত্রা আছে । অর্থাৎ ওই পরিমাণ কার্বাইড ব্যবহার করলে সাধারণত স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে না । তাছাড়া কার্বাইড ছাড়া ফলমূল পাকালে তা তাড়াতাড়ি পঁচে যায় বলে পৃথিবীতে পরিমিত কার্বাইড ব্যবহারের আইন আছে।

বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ৬(এ) ধারায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে । কেউ তা করলে তার ১৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে । দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে ।

* কার্বাইডের অস্তিত্ব শনাক্তের জন্য আড়তগুলোর আম ডিস্টিল ওয়াটারে ডুবিয়ে তাতে ক্যালসিয়াম ইনডিকেটর দেওয়া হয়। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম কিছুক্ষণ পর সবুজ রং ধারণ করে।

* ক্যালসিয়াম কার্বাইড বেশি পরিমাণে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে পাকস্থলি ও অন্ত্রনালিতে ক্যানসারও হতে পারে । কার্বাইড মিশ্রিত ফল খেলে পাকস্থলিতে প্রদাহ ও ঘা, বদহজম, পেটে গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয় ।

* বাজারে অ্যান্টি- আলসারেন্টের সেল ফিগার আর তার রাইজিং কার্ভ দেখেন । ডমপেরিডনের সেল ফিগার দেখেন । দেশের ভবিষ্যত টের পাবেন ।


চলবে ''''

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এবং আধ্যাত্নিকতায় রোজা ও রমজান

রমজান মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি মাস । এই মাসে সকল মুসলমান রোজা রাখে । ভোর রাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যার মাগরিবের আযানের সাথে সাথে ইফতার করে রোজা পূর্ণ করাই উদ্দেশ্য । মূলত সীমিত আহারের এ প্রক্রিয়াটি আমাদের মানবিকতা সম্পর্কে সচেতন ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে । ধর্ম বিষয়টি আধ্যাত্নিক আর রোজা আধ্যাত্নিকতার অনেক উঁচু একটি পর্যায় । আজকের আলোচনায় রোজার আধ্যাত্নিক ও বৈজ্ঞানিক দিক নিয়ে আলোচনা করব । আমার সীমিত জ্ঞ্যানে অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে । দয়া করে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি । কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে দ্বিধা না করে মন্তব্যের ঘরে আপনার প্রশ্ন বা মন্তব্য রাখুন ।

পৃথিবীর অনেক ধর্মে উপবাস বা রোজা রাখার বিধান রয়েছে । প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে রোজা কল্যাণকর । স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইফতারি ও সেহরির তাৎপর্যপুর্ণ ও ইতিবাচক ভুমিকা রয়েছে ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, দেহের বেশিরভাগ রোগের সৃষ্টি হয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের ফলে । এমনকি আমাদের গৃহীত খাদ্যদ্রব্যের ২৫ শতাংশ বা ততধিক অংশ অপ্রয়োজনীয় । আমাদের জন্য এ বাড়তি খাদ্যদ্রব্যাদি স্বাস্থ্য রক্ষায় বিপদের কারণ হয়ে থাকে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সর্বক্ষণ আহার, সীমাতিরিক্ত ভোজন ও দুষিত খাদ্য খাওয়ার কারণে শরীরে এক প্রকার বিষাক্ত জৈব বিষ জমা হয় । এই বিষগুলো আমাদের শরীরের ঘাম, মল, মুত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যায় । কিন্তু অতিরিক্ত বিষের কারণে দেহের নির্বাহী ও কর্মসম্পাদক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো বিষাক্ত উপকরণ ও জৈব বিষ দমনে অক্ষম হয়ে পরে । ফলে জটিল ও কঠিন রোগের জন্ম হয় । দেহের মধ্যকার এহেন বিষাক্ত ও দূষিত উপাদান গুলো অতি দ্রুত নির্মলকরণের নিমিত্তে পরিপাক যন্ত্রকে মাঝে মধ্যে খালি করা একান্ত প্রয়োজন । কিছুদিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পাকস্থলিকে খালি রাখার কারণে দেহের অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত জৈব ঘাম, মল, মুত্রের সাথে বের হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায় । সুতারাং ঐ বিষাক্ত জৈব শরীরের ভিতরে কোনো ক্ষতিসাধনে সক্ষম হয় না । রোজার সময় উপবাস থাকাকালীন পেটের মধ্যে কোনো খাদ্য সাময়িকভাবে মজুদ না থাকার ফলে শরীরের পরিপাক যন্ত্রের সাহায্যে বিষাক্ত রোগ জীবাণু শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ধংস করে । তাছাড়া খাদ্যদ্রব্য হজম ও খাদ্যপ্রাণ তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণের ব্যাপারে দেহের শক্তি প্রচুর পরিমাণে ব্যয় হয় । আর ঐ জমাকৃত শক্তি দেহের অব্যন্তরীণ পরিচ্ছন্ন সমতা, উন্নয়ন ও নবায়নের কাজে বিরাট সুযোগ পায় । এভাবে দেহের বাড়তি ওজন,রস,চর্বি ইত্যাদি হ্রাস পেয়ে চলাফেরা, কাজকর্মের গতি বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে ।

প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রোজা দ্বারা শরীরের মেদ কমাতে রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্যনিয়ন্ত্রণ অপেক্ষায় অধিক কার্যকর ।

পাকিস্তানের প্রখ্যাত প্রবীণ চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ হোসেন জানান, যারা নিয়মিত রোজা পালনে অভ্যস্ত সাধারণত তারা বাতরোগ,বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত কম হন ।

পাশ্চাত্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. ক্লাইভ বলেন সিয়াম সাধনার বিধান স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত । সেহেতু ভারত,জাপান,ইংল্যান্ড,দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তূলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় রোগ ব্যাধি অনেক কম দেখা যায় ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথিকৃত হিসেবে খ্যাত ডা. হিপোক্রেটিস অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে রোগাক্রান্ত দেহকে যতই পুষ্ট করার চেষ্টা করা হোক, তাতে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকবে ।

চিন্তাবিদ ডক্টর ডিউই, উপবাস থাকা প্রসঙ্গে বলছেন, 'রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলি হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগণ মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি ।'

রাশিয়ার অধ্যাপক ডি এন নাকিটন বলেছেন, তিনটি নিয়ম পালন করলে শরীরের বিষাক্ত দ্রব্যাদি বের হয়ে যাবে এবং বার্ধক্য থামিয়ে দেবে।' তার বর্ণিত নিয়ম তিনটি হলো অধিক পরিশ্রম, অধিক ব্যায়াম, এবং মাসে কমপক্ষে একদিন উপবাস।

প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের কখনো কখনো তিন সপ্তাহ ধরে উপবাস থাকতে নির্দেশ দিতেন ।

ডা. অ্যালেক্স হেইগ বলেন, ' রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয় ।

চিকিৎসকরা আরো বলেন রোজার কারণে সাইকোসোমাটিক জাতীয় ব্যাধিসমূহ রোজা রাখার কারণে তুলনামুলকভাবে কম হয় ।

রোজা রাখার কারণে মানবদেহে বিপাক ক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । কারণ রোজা পালনকালে মানবদেহে স্ট্রেস হরমোন করটিসোলের নিঃসরণ হ্রাস পায়। অপরদিকে রোজা রাখার কারণে কর্ম উদ্দীপনা ও মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি পায় । এর অন্যতম কারণ হলো রোজা রাখলে মস্তিষ্কের মেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায় । রোজা এদিক থেকে সুস্থ দেহ ও মনের জন্য সহায়ক । এ কারণে একজন খ্যাতনামা চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন । রোজা সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হলেও শুধু রোজা রাখলে যে স্বাস্থ্য সুস্থ থাকবে তা নয় । রোজায় স্বাস্থ্যকে নীরোগ রাখতে হলে ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে । রোজা পালন শেষে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাদ্য অত্যধিক গ্রহণের প্রবণতা কখনো পেটে প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করতে পারে । এজন্য ইফতারি বা সেহরিতে খাদ্য সহজপাচ্য হওয়া আবশ্যক ।

এব্যাপারে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান চিকিৎসা বিজ্ঞানী মুহাম্মদ (সাঃ) কম খাওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বারোপকরেছেন । ক্ষুধা লাগলে খেতে বলেছেন এবং ক্ষুধা থাকতেই খাওয়া বন্ধ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত ।

খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুযায়ী পেটের তিন ভাগের অন্তত একভাগ অংশ খালি রেখে খাদ্য গ্রহণ করলে অনেক সময় স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নিরাপদ থাকা যায় । মহানবী(সাঃ) এরশাদ করেন, রোজা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ । একনাগাড়ে একটি পূর্ণ চন্দ্র মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অসৎকাজ, ক্রোধ, লোভ,মোহ, মদ ইত্যাদি দমন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ফলে রোজাদারমাত্রই রোজার মাধ্যমে আত্মসংযমের পরিচয় দিয়ে মিথ্যা, পরনিন্দা, গালাগালি,বদমেজাজ, ফাঁকি দেয়া, নিরর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে নিবৃত থাকবে, সিয়াম সাধনার শিক্ষাই হলো এটি । আর এভাবে সারাবছর চলার এক বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রত্যেক রোজাদার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে পেয়ে থাকে । অতএব রোজার প্রভাব মানুষের ব্যক্তি,পারিবারিক ও সামাজিক এবং রাষ্ট্রিয় জীবনেও প্রবল ভূমিকা রাখে ।


চলবে'''