Home | Menu | Poem | Jokes | Games | Science | Biography | Celibrity Video | Dictionary |
জয়নুল আবেদিন ফারুক এবং ইসলামী দলের ডাকা হরতাল
টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে তেমন কোন অঘটন না ঘটলেও হরতালের প্রথম দিনের ভোর বেলার ঘটনা ছিল খুবই অপ্রত্যাশিত । জয়নুল আবেদিন ফারুকের মিছিল নিয়ে সংসদ ভবনের দিকে এগোনো, পুলিশ এবং কামেরার সামনেই গাড়ি লক্ষ করে ঢিল ছোড়া, পুলিশ বাঁধা দিতে আসলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া, " কি করবি কর " বলে ধামক দেয়া, পরবর্তীতে ফারুককে এসি বিপ্লব সরকারের, " শুয়োরের বাচ্চা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব " বলা এবং এসি বিপ্লব সরকার ও এডিসি হারুণের নেতৃত্বে ফারুকের কাপড় চোপড় খুলে মারধর সহ মাথা ফাটিয়ে দেয়া ছিল ঐদিন রাজনীতিতে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ।
এদিকে এসি বিপ্লব সরকার ও এডিসি হারুণের বিরুদ্ধেও জঘন্য সব অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে ।
হামলাকারী কে এই এডিসি হারুন ও এসি বিপ্লব
আমারদেশের নাছির উদ্দিন শোয়েবের রিপোর্টঃ
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটসহ সমমনা ১৫টি দল আহূত ৪৮ ঘণ্টা হরতালের প্রথমদিনে গতকাল এডিসি হারুন অর রশিদ ও এসি বিপ্লব কুমার সরকার বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে রক্তাক্ত জখম করেছে। লাঠি দিয়ে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। বুকের ওপর উঠে বুট দিয়ে লাথি মেরেছে। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। শুয়োরের বাচ্চা, চড় মেরে দাঁত ফেলে দিব বলে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো তেড়ে গেছে। সংসদ ভবনের কাছে বিনা উস্কানিতে এসময় কয়েকজন মহিলা এমপিকেও তারা লাঞ্ছিত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় ফারুককে এমপি হোস্টেলে নিয়ে গেলে সেখানে গিয়েও তার ওপর হামলা চালায় পুলিশ।
সরকারের এই দুই অসভ্য-বর্বর পুলিশ অফিসারের পরিচয় কি?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসময় চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে চাকরি নেয়ার পর থেকেই ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চোখে ‘বেয়াদব’ হিসেবে পরিচিত হলেও নানা অপকর্ম করে অদৃশ্য কারণে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান।
এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বাড়ি হওয়ার সুবাদে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নাম ভাঙিয়ে তিনি নানা অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। নিজেকে তিনি স্পিকারের ভাতিজা বলেও পরিচয় দেন। আর স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মোটা অংকের চাঁদাবাজি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় দখলবাজির রাজত্ব কায়েম করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
গুলশানে এডিসি থাকাকালে একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা টাকা ঘুষ নিয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ গুঁড়াদুধ ভেজাল বলে আটক করেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হওয়ার দাপটে তিনি সব সময়ই পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করতে চান। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ওই ব্যবসায়ীকে আটক করে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেন এডিসি হারুন। এ অভিযোগ পাওয়ার পর ওই বিভাগের তত্কালীন ডিসি ঘটনার তদন্তে সত্যতা পেয়ে শাস্তি হিসেবে তাকে এপিবিএনে বদলি করা হয়। সেখানে যোগদান না করে তদবিরের মাধ্যমে তিনি ওই আদেশ বাতিল করে তেজগাঁও জোনে পোস্টিং নেন।
১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে শিশু অপহরণ করে হলে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ ছিল। ওই সময় ঘটনাটি পত্রিকায় ছাপা হয়। হারুনের স্ত্রী আমেরিকা প্রবাসী হওয়ার কারণে তিনি অনেক সময় ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। স্ত্রী আমেরিকার নাগরিক হওয়ার সুবাদে হারুনেরও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব। মাঝে মাঝেই তিনি আমেরিকায় যান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোটা অংকের টাকা কামিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চিন্তা তার মধ্যে রয়েছে বলেও তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তার ঘনিষ্ঠ অনেকেই বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আলোচনায় এসে ভবিষ্যতে মিঠামইন এলাকা থেকে এমপি নির্বাচনে অংশ নেয়ারও খায়েশ রয়েছে হারুনের।
অন্যদিকে মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমারের বিরুদ্ধে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। ২১তম বিসিএস ক্যাডারে চাকরি নেয়া বিপ্লব সরকার ছিলেন ছাত্রলীগ জগন্নাথ হল শাখার সেক্রেটারি। পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পর নিজের অতীত কৃতকর্মের কথা ভেবে ২০০৩ সালের অক্টোবরে সারদায় ট্রেনিং করেই ডিভি ভিসা পেয়ে আমেরিকায় চলে যান। ৭ বছর আমেরিকায় থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসেন। পুলিশের ভাষায়, এসময় তিনি ছিলেন ফেরারি। কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন কর্মস্থলে না থাকায় তার বিরুদ্ধে জিডিও করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর অনুপস্থিত থেকে দেশে ফিরে রহস্যজনকভাবে পুনরায় চাকরি ফিরে পান তিনি। অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিপ্লবের স্ত্রী ভারতে পড়াশোনা করছে। কিছুদিন পর পর তিনি ভারতে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কাটিয়ে আসেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ সদরের বাসিন্দা বিপ্লবকে বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর জোনে বদলি করা হয়। তিনি জয়নুল আবদিন ফারুককে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।
তাদের অ্যাকশন দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন—পুলিশের পোশাকে এরা আসলে কারা? আওয়ামী লীগ এমপি-মন্ত্রীদের নজর কাড়তেই হরতালে অতিউত্সাহী সাবেক এই ছাত্রলীগ ক্যাডার হারুন অর রশিদ এবং বিপ্লব কুমার সরকার সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সফল হয়েছেন।
এ ব্যাপারে হারুন অর রশিদ জানান, তিনি জয়নুল আবদিন ফারুককে মারধর করেননি। গাড়ি ভাংচুরে বাধা দিলে ধস্তাধস্তিতে হয়তো মাটিতে পড়ে গিয়ে তিনি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে বিপ্লব সরকারও একই সুরে নিজের অপকর্মের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিরোধী দলের চিফ হুইপসহ কয়েকজন এমপিকে রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেছে মাত্র। লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত করা এবং অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার দৃশ্য বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হলেও এই দুই পুলিশ সদস্য সব কিছুই অস্বীকার করেন।
এখন কথা হল জয়নুল আবেদিন ফারুখই কেন ঢিল ছুরলেন, পুলিশের সঙ্গে উদ্ধতপূ্র্ণ মাস্তানি করলেন, পুলিশই বা কেন এভাবে দেশের শির্ষ দলের চীফ হুইপের উপর আক্রমণ করল বা সাহস পেল এভাবে আক্রমণ করার । আসলে এ ধরনের ঘটনা অতিতেও আমরা বহুবার দেখেছি । সরকারে যে দলই থাকুক না কেন, বিরোধী দলের মিছিলে কিংবা বিশেষ বিশেষ নেতার উপর ছলে বলে কৌশলে নির্মম ভাবে আক্রমণ করা হয় । আর দলেরই কিছু কিছু নেতা খুবই উশৃঙ্খল এবং মারমুখি মাস্তানের মত । তাদের কেউ কেউ চিন্হিত সন্ত্রাসীও বটে, যারা একসময় বিরোধী দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে এমনকি ক্যামেরার সামনেও মারামারিতে অংশ নিয়েছেন । শীর্ষ দুই দলেরই হাই কমান্ড বেছে বেছে তাদেরকেই দলের সর্বচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন ।
ইসলামী দলগুলোর ১০ ও ১১ জুলাই টানা ৩০ ঘণ্টার ডাকা হরতালের প্রথম দিনের সকালের পুলিশ ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষ ছিল দেখার মত । সেদিন পুলিশের চেয়ে সরকারি দলের অ্যাকশন দেখে মনে হয়েছে, সেখানে পুলিশের কোন প্রয়োজন ছিল না । উঠতি বয়সের অনভিজ্ঞ ছেলেদেরকেই মাঠে নামানো হয়েছিল হাই কমান্ডের নির্দেশে । দুঃখের বিষয় সব রাজনৈতিক দলগুলোই বিরোধী দলের সাথে অত্যন্ত বৈরি আচরণের মাধ্যমে স্বার্থ সিদ্ধি করার চেষ্টা করছে । যা সবসময়ই অত্যন্ত ক্ষতি সাধন করে । অথচ একটু ঠান্ডা মাথায় পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করলে অন্তত হাজারটা উপায় আছে , যাতে নৃশংসতা এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সঠিক পথে সমাধান সম্ভব । তাহলে কেন এই নৃশংসতা । নিশ্চয়ই এটি একটি প্রশ্নবিদ্ধ জীজ্ঞাসা ।
চলবে..
পূর্বের প্রবন্ধ দেখুন
Subscribe to:
Posts (Atom)