Home | Menu | Poem | Jokes | Games | Science | Biography | Celibrity Video | Dictionary

দুর্গাপূজার ইতিহাস

মূর্তিতত্ত্ব

বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা বা সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী; তাঁর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ; বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিকেয়।কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই সপরিবার দুর্গার প্রচলন করেন । তাঁরা কার্তিকেয়র রূপ দেন জমিদারপুত্রের, যা তৎপূর্ব ছিল সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতা রূপে । এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর-সংলগ্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গা এক বিশেষ মূর্তি দেখা যায়। সেখানে দেবীর ডানপাশে উপরে গণেশ ও নিচে লক্ষ্মী, বামে উপরে কার্তিকেয় ও নিচে সরস্বতী এবং কাঠামোর উপরে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন শিব ও দুইপাশে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া অবস্থান করেন। কলকাতার কোনও কোনও বাড়িতে দুর্গোৎসবে লক্ষ্মী ও গণেশকে সরস্বতী ও কার্তিকেয়ের সঙ্গে স্থান বিনিময় করতে দেখা যায়। আবার কোথাও কোথায় দুর্গাকে শিবের কোলে বসে থাকতেও দেখা যায়। এগুলি ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গার বিভিন্ন রকমের স্বতন্ত্র মূর্তিও চোখে পড়ে। তবে দুর্গার রূপকল্পনা বা কাঠামোবিন্যাসে যতই বৈচিত্র থাকুক, বাংলায় দুর্গোৎসবে প্রায় সর্বত্রই দেবী দুর্গা সপরিবারে পূজিতা হন। এই প্রসঙ্গে স্বামী প্রমেয়ানন্দের উক্তিটি স্মরণীয়ঃ


...ধনদাত্রী লক্ষ্মী, বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী, শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিকেয়, সিদ্ধিদাতা গণেশ ও তাঁদের বাহন-সকলের মূর্তিসহ মহামহিমময়ী দুর্গামূর্তির পরিকল্পনা ও পূজা বাংলার নিজস্ব।

দুর্গা

হিন্দু শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা নিম্নোক্তরূপে প্রদত্ত হয়েছে :



দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।

উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।



- ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে এই দেবীই ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’ বা সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি।

সিংহ

উত্তর কলকাতার কাশীপুরের একটি মণ্ডপে তাপসীবেশে সিংহবাহিনী মহিষাসুরমর্দিনী

দেবী দুর্গার বাহন সিংহ। শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে দেবীর বাহন ‘বাহনকেশরী’, ‘ধূতসট’ প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত হয়েছে। দুর্গোৎসব কালে সিংহেরও পূজা কর্তব্য বলে গণ্য হয়।

সিংহ রজোগুণের এক প্রচণ্ড শক্তির উচ্ছ্বাসের প্রতীক। স্বামী নির্মলানন্দ বলেছেন,


সত্ত্বগুণের অনুগত হলে সেই শক্তি লোকস্থিতির সহায়ক হয়ে ওঠে। ... (সিংহ) আসুরিকতা ও পাশবিকতার উচ্ছেদ সাধনপূর্বক দেবীর লোকস্থিতিমূলক পূণ্য কর্মের সহায়কারী।

এছাড়াও সিংহ মানুষের পশুত্ববিজয়েরও প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দ লিখেছেন,


প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে পশুশক্তি। পুরুষকার ও সাধন-ভজনের দ্বারা মানুষ যখন যথার্থ মনুষ্যত্বে উপনীত হয় তখন তার পশুভাব কেটে গিয়ে দেবভাব জাগ্রত হয়। আর তখনই সে প্রকৃত শরণাগত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে, সার্থক জীবনের অধিকারী হয়। দেবীর চরণতলে সিংহ সেই ভাবেরই প্রতীক।

মহিষাসুর

বেহালার ২৯ পল্লির থিম পূজামণ্ডপে দেবীপ্রতিমায় বাঁকুড়া জেলার লোকশিল্পের ছোঁয়া, ২০০৭

মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দের ভাষায়,


সাধকের পক্ষে অসুর অবিদ্যা। বিদ্যারূপিণী মা অবিদ্যা বিনাশ করে মহামুক্তির বিধান করেন। সাধারণ মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, ভয়-ভীতি, আপদ-বিপদ – এ-সকলই আসুরিক শক্তির কার্য। পরমকরুণাময়ী মা নিরন্তর অসুর বিনাশ করে সন্তানের কল্যাণ বিধান করছেন।

তবে অসুর হলেও দুর্গোৎসবে মহিষাসুরেরও পূজার চল আছে। কালিকা পুরাণ অনুসারে, মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে নিজের মৃত্যুদৃশ্য স্বপ্নে দেখে ভীত মহিষাসুর ভদ্রকালীকে তুষ্ট করেছিলেন। ভদ্রকালী তাঁকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিলেও তাঁর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বরদান করতে ইচ্ছুক হন। মহিষাসুর দেবতাদের যজ্ঞভাগ বর চাইলে দেবী সেই বর দিতে অস্বীকৃত হন; কিন্তু মহিষাসুরকে এই বর দেন যে যেখানেই দেবী পূজিতা হবেন, সেখানেই তাঁর চরণতলে মহিষাসুরেরও স্থান হবে।

গণেশ

গণেশ সিদ্ধির দেবতা। পুরাণ অনুসারে, তিনি সর্বাগ্রপূজ্য। গণেশের পূজা না করে অপর কোনও দেবতার পূজা করার বিধান নেই। স্বামী প্রমেয়ানন্দের ভাষায়,


গণশক্তি যেখানে ঐক্যবদ্ধ সেখানে কর্মের সকল প্রকার বাধাবিঘ্ন দূরীভূত হয়। দেবাসুর-যুদ্ধে দেবতারা যতবারই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসুরদের সঙ্গে লড়াই করেছেন ততবারই তাঁরা জয়ী হয়েছেন। গণেশের আর এক নাম বিঘ্নেশ, অর্থাৎ বিঘ্ননাশকারী। বিঘ্নেশ প্রসন্ন থাকলে সিদ্ধি নিশ্চিত।
বেহালার একটি পূজামণ্ডপে সনাতন বাঙালি ভাস্কর্যে সপরিবার দুর্গা, ২০০৭

মুষিক

গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর মায়া ও অষ্টপাশ ছেদনের প্রতীক। ব্রহ্মর্ষি শ্রীসত্যদেবের ভাষায়,


অথর্বশীর্ষের সায়নভাষ্যে উক্ত হইয়াছে মুষ্ণাতি অপহরতি কর্মফলানি ইতি মূষিকঃ। জীবের কর্মফলসমূহ অজ্ঞাতসারে অপহরণ করে বলিয়া ইহার নাম মূষিক। প্রবল প্রতিবন্ধকস্বরূপ কর্মফল বিদ্যমান থাকিতে সিদ্ধিলাভ হয় না। তাই, কর্মফল হরণের উপর সিদ্ধি প্রতিষ্ঠিত।

লক্ষ্মী


লক্ষ্মী শ্রী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যুদয়ের প্রতীক। শুধু ধনৈশ্বর্যই নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক। স্বামী নির্মলানন্দের ভাষায়,


ধন, জ্ঞান ও শীল – তিনেরই মহনীয় বিকাশ দেবী লক্ষ্মীর চরিত্রমাহাত্ম্যে। সর্বাত্মক বিকাশের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা বলেই তিনি কমলা। কমল বা পদ্মের ন্যায়ই তিনি সুন্দরী; তদীয় নেত্রদ্বয় পদ্মের ন্যায় আয়ত। তাঁর শুভ করে প্রস্ফুটিত পদ্মকুসুম; পদ্মবনেই তাঁর বসতি।

মহানামব্রত ব্রহ্মচারী অন্যদিকে সমুদ্রমন্থনে সমুদ্ভূতা দেবী লক্ষ্মীর মূর্তিতত্ত্বের অপর এক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন,


যাঁহারা বিচক্ষণ তাঁহারা ভূমি-প্রকৃতি কর্ষণ করিয়া শস্যধন আহরণ করেন, বন-প্রকৃতি অনুসন্ধান করিয়া ধন আহরণ করেন। খনি প্রকৃতি খনন করিয়া স্বর্ণধন সংগ্রহ করেন। এই সকলই সাগরমন্থন। ... এই সকল সাগর-মন্থনে ধনাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীর আবির্ভাব।

পেচক

মধ্য কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কের দুর্গাপ্রতিমায় নারীজাগরণের বার্তা, চালচিত্রে বাংলা তথা ভারতের মহীয়সী নারীগণ, ২০০৭

লক্ষ্মীর বাহন পেচক বা প্যাঁচা। রূপে ও গুণে অতুলনীয় এই দেবীর এমন কিম্ভূত বাহন কেন, সে নিয়ে বেশ কয়েকটি মত প্রচলিত। প্রথমেই স্মরণে রাখা কর্তব্য, হিন্দু শাস্ত্রে কোথাও পেচককে লক্ষ্মীর বাহনের মর্যাদা দান করা হয়নি। এই বিশ্বাস একান্তই বাঙালি লোকবিশ্বাস।

প্যাঁচা দিবান্ধ। মনে করা হয়, যাঁরা দিবান্ধ অর্থাৎ তত্ত্ববিষয়ে অজ্ঞ, তাঁরাই পেচকধর্মী। মানুষ যতকাল পেচকধর্মী থাকে ততদিনই ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে সে। মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর মতে,


পেচক মুক্তিকামী সাধককে বলে, সকলে যখন ঘুমায় তুমি আমার মতো জাগিয়া থাকো। আর সকলে যখন জাগ্রত তখন তুমি আমার মতো ঘুমাইতে শিখ, তবেই সাধনে সিদ্ধি। কৈবল্যধন লাভ।

পরমার্থধনাভিলাষী সাধক পেঁচার মতো রাত্রি জাগিয়া সাধন করে। লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্জনে থাকে। লক্ষ্মীমার বাহন রূপে আসন লইয়া পেচকের যে ভাষণ তাহা বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রকার সাধকের উপাদেয় সম্পদ।


সরস্বতী

দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের দুর্গাপূজা, ২০০৫

সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী; তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক।


দেবীর হাতে পুস্তক ও বীণা। পুস্তক বেদ শব্দব্রহ্ম। বীণা সুরছন্দের প্রতীক নাদব্রহ্ম। শুদ্ধ সত্ত্বগুণের পূর্তি, তাই সর্বশুক্লা। শ্বেতবর্ণটি প্রকাশাত্মক। সরস্বতী শুদ্ধ জ্ঞানময়ী প্রকাশস্বরূপা। জ্ঞানের সাধক হইতে হইলে সাধককে হইতে হইবে দেহে মনে প্রাণে শুভ্র-শুচি।

হংস

সরস্বতীর বাহন হংস। হংস হিন্দুদের নিকট একটি পবিত্র প্রতীক।


সরস্বতী-ব্রহ্মবিদ্যা। যে সাধক দিবারাত্র অজপা মন্ত্রে সিদ্ধ তিনিই হংসধর্মী। মানুষ সুস্থ শরীরে দিবারাত্র মধ্যে একুশ হাজার ছয়শত ‘হংস’ এই অজপা মন্ত্রজপরূপে শ্বাস-প্রশ্বাস করিয়া থাকে। মানুষ যতদিন এই স্বাভাবিক জপ উপলব্ধি করিতে না পারে, ততদিন ‘হংসধর্মী’ হইতে পারে না; সুতরাং ব্রহ্মবিদ্যারও সন্ধান পায় না।

কার্তিকেয়

বেহালার জিতেন্দ্র স্মৃতি সংঘের জৌলুশপূর্ণ দেবীপ্রতিমা, ২০০৭

দেবসেনাপতি কার্তিকেয় বা কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক।


যুদ্ধে শৌর্য-বীর্য প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই সাধক-জীবনে এবং ব্যবহারিক জীবনে কার্তিকেয়কে প্রসন্ন করতে পারলে শৌর্য-বীর্য আমাদের করতলগত হয়...

ময়ূর

কার্তিকেয়ের বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য ও শৌর্য – কার্তিকেয়ের এই দুই বৈশিষ্ট্যই তাঁর বাহন ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান।

শিব

অন্যান্য মূর্তি

আচার ও অনুষ্ঠানসমূহ

চণ্ডীপাঠ

মহালয়া

দুর্গাষষ্ঠী

কল্পারম্ভ

বোধন

আমন্ত্রণ ও অধিবাস

সপ্তমীপূজা

নবপত্রিকা

অষ্টমীপূজা

কুমারী পূজা

সন্ধিপূজা

নবমীপূজা

দশমীপূজা

বিসর্জন ও বিজয়া দশমী কৃত্য

পূজা উদযাপন

পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতা

অন্যান্য স্থান

বাংলাদেশ

চিত্রকক্ষঃ বাংলাদেশে দুর্গোৎসব