অনেকেরই ধারনা মানুষখেকো গাছ আছে । আফ্রিকাতে এসব গাছ পাওয়া যায় । যা মানুষ খেয়ে ফেলে । আদতে এরকম কোন গাছের অস্তিত্ব নেই । তবে কিছু গাছ আছে যা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে থাকে । তেমনি একটা গাছ হল ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ যা একধরণের মাংসাশী উদ্ভিদ । এটি বাংলাদেশের সিলেট জেলা ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই দেখতে পাওয়া যায় । এ উদ্ভিদটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার জলাভূমিতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় । পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। যেমনঃ
* ভেনাস ফাইট্র্যাপ
* ওয়াটারহুইল
* সূর্যশিশির
* কলসী উদ্ভিদ
* দক্ষিণ আমেরিকান কলসী উদ্ভিদ
বেঁচে থাকা আর নির্দিষ্ট কোন পরিবেশে বৃদ্ধির কারণে এ ধরণের উদ্ভিদ মাংসাশী হয়ে থাকে। বেঁচে থাকার জন্য সব উদ্ভিদকেই মাটি থেকে পানি এবং বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের উপস্থিতিতে এসব উপাদানের সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলিত হয়ে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন। এজন্য নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ মাটিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ সবচেয়ে ভালো জন্মে, কিন্তু মাংসাশী উদ্ভিদ জন্মে ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। এখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুব অল্প থাকে। যেসব গাছ মূল দিয়ে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারা এ পরিবেশের মাটিতে জন্মাতে পারেনা। বেঁচে থাকার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদরা অন্য একটি পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রাণীকে ফাঁদে আটকে ফেলে। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের পাতাগুলো এ কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
প্রথমত এসব উদ্ভিদ প্রাণীদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আকর্ষন করে। অন্যান্য প্রাণীর মত এসব উদ্ভিদ কাছে গিয়ে কোন কিছু শিকার করতে পারেনা। বরং শিকার কখন কাছে আসবে এজন্য তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য পোকামাকড় এবং অন্য প্রাণীদের আকর্ষণ করতে তাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। কোন কোন মাংসাশী উদ্ভিদ বাতাসে একধরণের গন্ধ ছড়ায় যা মাছি, মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ার মত পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। আবার কোন কোন উদ্ভিদ মাছি কিংবা অন্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করতে একধরণের পঁচা গন্ধ ছড়ায়। অনেক মাংসাশী উদ্ভিদের দেহে উজ্জ্বল রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের পাতার চারদিকে ছোট্ট মুক্তোদানার মত চকচকে কিছু জিনিসের আবরণে ঢাকা থাকে। এগুলো উজ্জ্বল রঙ এবং সুমিষ্ট গন্ধের সাহায্যে পোকামাকড়কে প্রলুদ্ধ করে। সুকৌশলে আটকে রাখা এসব ফাঁদে প্রাণীরা আটকা পড়ে।
মাংসাশী উদ্ভিদে সাধারণত দুই ধরণের ফাঁদ দেখা যায়। নড়াচাড়া করতে পারে এমন প্রত্যক্ষ ফাঁদ (Active Trap)। আর নড়াচাড়া করতে পারেনা এমন ফাঁদের নাম পরোক্ষ ফাঁদ (Passive Trap)। ফাঁদ যে ধরণেরই হোক না কেন সব ফাঁদই মাংসাশী উদ্ভিদকে পোকামাকড় ধরে খেতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি উদ্ভিদে আনেকগুলো ফাঁদ থাকে। সব ফাঁদই পোকামাকড় ধরা, পরিপাক করা আর পুষ্টি সংগ্রহের জন্য একযোগে কাজ করে।
ভেনাস ফাইট্র্যাপ, ওয়াটারহুইল ইত্যাদি উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ ফাঁদ আছে। তাদের উপর কোন পোকামাকড় বসামাত্রই ওরা কোন অঙ্গকে নাড়াচাড়া করে পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলে দেয়। দ্রুতবেগে নড়তে সক্ষম এসব অঙ্গগুলো একসঙ্গে দাঁতওয়ালা চোয়ালের মত কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের ফাঁদের দরজা আবার খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের গঠন
সম্পূর্ণ একটি উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট (৩০ সে.মি.)। বসন্তকালে এর লম্বা মাথার ওপর চমৎকার সাদা ফুল ফোটে। কিন্তু উদ্ভিদটির সবচেয়ে দর্শনীয় জিনিসটি হচ্ছে এর পাতা। ফাইট্র্যাপের সরু সবুজ পাতাগুলো উদ্ভিদটির গোড়ার চারপাশে জন্মে। প্রত্যেকটি পত্রফলক ঝিনুকের খোলসে মত দুইখন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। প্রত্যেকটি খন্ডের মাঝখানে একটি মধ্যশিরা থাকে। খন্ড দুটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ ইঞ্চি (২.৫ সে.মি.)। খন্ড দুটির ভেতরের তল সাধারণত লাল রঙের হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি খন্ডের চারপাশের বাইরের প্রান্তে অসংখ্য শক্ত, সূচালো শুঙ্গ থাকে। এগুলোকে বলা হয় সিলিয়া। প্রত্যেকটি খন্ডের ভেতরের দিকে তিনটি ট্রিগার হেয়ার থাকে।
শিকারের পদ্ধতি
সিলিয়ার ভেতরের ট্রিগার হেয়ারগুলোই উদ্ভিদের ফাঁদ। এগুলো দেখতে পাতার মত। পাতার খন্ড দুটি খোলা অবস্থায় ফাঁদটি শিকার করার জন্য তৈরি থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ একটি মাকড়সা পাতার লাল রঙ আর পাতার কিনারায় থাকা মধুর মত মিষ্টি জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। মাকড়সাটি পাতার কিনারায় আসামাত্রই ট্রিগার হেয়ারগুলোতে টান পড়ে। তবে ফাঁদটি বন্ধ হওয়ার জন্য দুটি সঙ্কেতের প্রয়োজন। একটি ট্রিগার হেয়ার দু'বার স্পর্শ করলে ফাঁদটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। উদ্ভিটটি বুঝতে পারে যে, কোন ঘাস বা পাতার টুকরো নয় বরং কোন জ্যান্ত প্রাণী ফাঁদে আটকা পড়েছে। দু'বার সংকেত পেলেই পাতার খন্ড দুটি খুব দ্রুত মাকড়সাটির চারপাশে এসে বন্ধ হয়ে যায়। সিলিয়াগুলো একসাথে বন্ধ হয়ে পালানোর পথও বন্ধ করে দেয়। এ পর্যায়ে খুব ছোট্ট একটি মাকড়সা কিংবা পোকামাকড় সিলিয়ার ভেতর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে। উদ্ভিদটি এ ধরণের পোকামাকড়পকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। ফাঁদের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরই পাতার ভেতর থেকে এক ধরণের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। তরলের মধ্যে মাকড়সাটি ডুবে যায়। এ তরল পদার্থের মধ্যে থাকে পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচক। এগুলো মাকড়সার দেহটিকে এমন অবস্থাতে পরিণত করে ফেলে যা থেকে উদ্ভিটটি সহজেই পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। উৎসেচক যত বেশি পারিমাণে আসে মাকড়সার মৃতদেহের নরম অংশগুলোও ততই ধীরে ধীরে গলতে থাকে। ৮/১০ দিন পর মাকড়সাটির দেহের অংশগুলো নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ তরল পদার্থে পরিণত হয় যা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়ে যায়। মৃতদেহের যেসব শক্ত অংশগুলো উদ্ভিদটি হজম করতে পারেনি সেগুলো ফাঁদটি খুলে বের করে দেয়। ফাঁদ আবার আগের মত পেতে রাখা হয়। নষ্ট হয়ে যাবার আগে একটি ফাঁদ অন্তত তিনবার শিকার ধরে ফাইট্র্যাপ গাছকে সহায়তা করে।
ওয়াটারহুইল (উদ্ভিদ)
ওয়াটারহুইল এক প্রকার মাংসাশী উদ্ভিদ। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও আফ্রিকাতে এ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। আকারে ছোট, শিকড়হীন এ উদ্ভিদটি পুকুর বা জলাশয়ের উপরে ভাসতে দেখা যায়। এ উদ্ভিদটি সম্পূর্ণ ৪-১২ ইঞ্চি (১০-৩০ সে.মি.) লম্বা হয়। বসন্তকালে এতে ছোট্ট সাদা ফুল ফোটে। উদ্ভিদটির শিকার ধরার ফাঁদ পানির নিচে থাকে। প্রত্যেকটি উদ্ভিদের কতগুলো স্বচ্ছ পাতাসহ একটি সরু কান্ড থাকে। কান্ডের চারদিকে ৮ টি পাতা চাকা স্পোকের মত সাজানো থাকে বলে উদ্ভিদটিকে ওয়াটারহুইল বলা হয়।
এ উদ্ভিদের পাতাগুলোই ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। পাতাগুলো আকারে বেশ ছোট, দৈর্ঘ্যে মাত্র এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ (৬ মিলিমিটার)। আকারে খুব ছোট এদের শিকার গুলোও খুব ছোট হয়ে থাকে। এতে ধরা পড়ে উকুনের মত ছোট্ট এক ধরনের জলজ প্রাণী। প্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত আণীবীক্ষণিক জলজ প্রাণীকুল আর জলজ প্রাণীদের লার্ভা। ওয়াটার হুইলের পাতাগুলো কাজ করে পানির নিচের ভেনাস ফাইট্র্যাপের মত। এদের পাতা দুটি খন্ডে বিভক্ত। এখানে সারিবদ্ধভাবে শুঙ্গ সাজানো থাকে। আর খন্ডগুলোর মধ্যে থাকে ট্রিগার হেয়ার। একটি পোকা ফাঁদে প্রবেশ করলে পাতার খন্ড দুটি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াটারহুইল তখন শিকারকে পরিপাক করে ফেলে এবং পরবর্তী শিকার ধরার জন্য ফাঁদ আবারো প্রস্তুত হয়ে যায়।
কলসী উদ্ভিদ
কলসি উদ্ভিদকে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করা হয়। এর ইংরেজি নাম Pitcher plant. কলসি উদ্ভিদে ফাঁপা বিশেষ ধরনের পাতা রয়েছে যা একটি জগ কিংবা কলসির মত পানি ধারণ করে রাখতে পারে। কলসির মত দেখতে এ পাতাগুলোই শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এদের গঠন ও আকৃতি থেকেই এদেরকে নাম দেওয়া হয়েছে কলসি উদ্ভিদ।
পৃথিবীতে প্রায় ৮০ প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে একটি হলো দক্ষিণ আমেরিকান কলসি উদ্ভিদ (North American Pitcher Plant)। মালয়েশিয়া, মাদাগাস্কার, ভারত ও শ্রীলংকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলাভূমিতেও বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদ দেখা যায়।
গঠন ও আকৃতি
গ্রীষ্মমন্ডলীয় কলসি উদ্ভিদে সাধারণ পাতা এবং উজ্জ্বল রঙের কলসির মত পাতা দুটোই রয়েছে। একটি আকর্ষী থেকে ধীরে ধীরে সুতোর মত একটি পাতা উৎপন্ন হয়। পাতাটি বড় হতে হতে ফুলে উঠে রঙিন একটি জগের মত আকৃতি লাভ করে। এর ওপরের দিকে পাতার তৈরি একটি ঢাকনাও তৈরি হয়। কোন কোন কলসি উদ্ভিদে ঢাকনাটি কলসির কিনারে শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন প্রজাতির কলসি উদ্ভিদের পাতাগুলোর আকার, রঙ ও আকৃতি ভিন্ন হতে পারে। এগুলোর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি (৫ সে.মি.) থেকে শুরু করে ২ ফুট (৬০ সে.মি.) পর্যন্ত হতে পারে।
শিকার পদ্ধতি
ছোট ছোট কলসি উদ্ভিদগুলো মাছি, গুবরে পোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড় শিকার করে। বড় আকারের কলসি উদ্ভিদগুলো ছোট আকারের ব্যাঙ কিংবা ইঁদুর শিকার করে। কিন্তু সব কলসি উদ্ভিদই এক পদ্ধতিতে শিকার করে। কলসি উদ্ভিদের ফাঁদ পরোক্ষ ধরনের। অর্থাৎ এরা কোন নাড়াচাড়া ছাড়াই শিকার ধরে থাকে। কলসি উদ্ভিদের গঠন এমন যে এর ভেতরে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া পোকামাকড়দের জন্য এটি বন্দিশালার মত কাজ করে। কলসের সঙ্গে আটকানো পাতাটি লম্বা নলের মত কাজ করে। নলের মাথায় থাকে রঙচঙে একটি প্রবেশ পথ। নলের তলদেশ অংশটি পেয়ালাকৃতির। যেসব কলসি উদ্ভিদ মাটির কাছাঁকাছি জন্মে তাদের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে থাকে। অধিকাংশ কলসি উদ্ভিদের ঢাকনাটি প্রবেশ পথ দিয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির পানি ঢুকতে বাধা দেয়। ঢাকনাটি সবসময় খোলা থাকে। কলসির প্রবেশ মুখে এক ধরনের মধু উৎপন্ন হয়। কলসির উজ্জ্বল রঙ আর মধুর লোভে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় ওড়ে কিংবা হামাগুড়ি দিয়ে কলসির ভিতরে প্রবেশ করে। ভেতরেই ঢুকে এটি মধু উৎপন্ন করে এবং আরো মধুর লোভে কলসির আরো ভিতরে ঢুকে যায়। পোকাটি কলসির নলের ভিতরেই ঢোকার পরই বিপদে পড়ে যায়। নলের ভিতরের দেয়ালটি বরফের মতই মসৃণ আর পিচ্ছিল। ফলে পোকাটি পিছলে গিয়ে নলের আরো তলের দিকে পড়ে যায়। নলের তলদেশে থাকে অসংখ্য শুঙ্গ। শুঙ্গগুলো সবই কলসির নিচে জমানো পানির দিকে ফেরানো থাকে। এগুলো পার হয়ে পোকাটি নিচে পড়ে গেলে তার পক্ষে আর আর ওপরের দিকে ওঠা সম্ভব হয়না। একসময় এটি তলদেশের পানিতে ডুবে যায়। এরপর পরিপাকে সাহায্যকারী উৎসেচকগুলো কলসির তলদেশে বেরিয়ে আসে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো পরিপাক হয়ে উদ্ভিদের দেহে শোষিত হয়। শক্ত অংশগুলো কলসির নিচের তলদেশে জমা হয়।
সূর্যশিশির
সূর্যশিশির এক প্রকার মাংসাশী উদ্ভিদ। সূর্যশিশিরের পাতাগুলো ছোট আর গোলাকার। এ উদ্ভিদটি আঠালো ফাঁদওয়ালা মাংসাশী উদ্ভিদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলেই জলাভূমি অঞ্চলে এ উদ্ভিদ জন্মে। বাংলাদেশেও কোথাও কোথাও এ উদ্ভিদ দেখা যায়।
ছোট আকারের এ উদ্ভিদটি মাত্র ৩.৫ ইঞ্চি (৮ সে.মি.) চওড়া। এটি প্রায়ই বড় ধরণের আগাছা ও এর আশেপাশে জন্মানো গাছপালার নিচে লুকানো অবস্থায় থাকে। এর পাতাগুলো ছোট এবং গোলাকার। গ্রীষ্মকালে গোলাকার পাতাগুলোর উঁচু কান্ডগুলোতে সাদা সাদা ফুল ফোটে। সূর্যশিশিরের পাতাগুলোকে উজ্জ্বল লাল রঙের দেখায়। মনে হয় ওগুলোর উপর শিশির কণা চিকচিক করছে। লালচে শিশির বিন্দু দ্বারা আবৃত এ পাতাগুলো আসলে পোকামাকড় ধরার মরণ ফাঁদ। সূর্যশিশিরের পাতাগুলো বিভিন্ন উচ্চতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বোঁটা দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রত্যেকটি বোঁটার ওপর থাকে অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থি বা অঙ্গ যা এক ধরণের স্বচ্ছ আঠালো তরল পদার্থ উৎপন্ন করে। এ তরল পদার্থটি বোঁটাগুলোর ওপর শিশির বিন্দুর মত জমা হয়। তরল নিঃসরণকারী গ্রন্থিটি দেখতে লাল বলে এর ওপরের তরল পদার্থটিও লালচে বলে মনে হয়। সূর্যশিশির এক ধরণের সুগন্ধও বাতাসে ছড়ায়।
মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড় উজ্জ্বল লাল রঙ, শিশির বিন্দু আর সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে উদ্ভিদের কাছে চলে আসে। কিন্তু পোকা গাছটির পাতার ওপর নামা মাত্রই পোকার পাগুলো পাতার উঁচু বোঁটায় থাকা তরল পদার্থে আটকে যায়। পা ছাড়িয়ে নিতে ওরা যতই টানাটানি করে ততই পাতার গ্রন্থিগুলো থেকে আরো বেশি করে আঠালো রস বের হতে থাকে। এভাবে পোকামাকড়গুলো আরো শক্তভাবে পাতায় আটকে যায়। পোকার চারপাশে থাকা বোঁটাগুলো বেঁকে গিয়ে আরো বেশি পরিমাণে রস বের করতে থাকে। সম্পূর্ণ পাতাটি কুঁচকে গিয়ে পোকাটির চারপাশে একটি পেয়ালার মত আকার গঠন করে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো গলে গিয়ে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত সূর্যশিশির উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমগুলো কাজ করে। ৪-৫ দিন পর সূর্যশিশিরের পাতা ও বোঁটাগুলো আবার আগের মত সোজা হয়ে যায়।